রূপকথার গল্পের মতো ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারে ১৯৯৩ সালে মাটি খুঁড়ে নানা কারুকার্যখোচিত নয়টি মসজিদের সন্ধান পাওয়া যায়। বন-জঙ্গল আর মাটি সরিয়ে অভিনব সব স্থাপনা আবিষ্কার করা হলেও তার ইতিহাস ‘মাটিচাপা’ পড়েই থাকছে। মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় আরো ছয়টি প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন।
অল্প জায়গার ভেতরে একের পর এক মাটি খুঁড়ে ৬৫০ বছরের প্রাচীন প্রতœতত্ত্বের সন্ধান মিললেও এখানে কোনো পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসে এখানে। বড়দের পাশাপাশি ঐতিহাসিক এসব স্থাপনা দেখে মুগ্ধ হয় শিশু-কিশোররাও। কিন্তু এখন সংস্কারের অভাবে প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শনগুলো ধ্বংসের পথে।
ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে বারোবাজারের অবস্থান ২৬ কিলোমিটার দূরে। এখানে বারোবাজারের রেললাইনের পশ্চিম পাশে ৩ বর্গকিলোমিটার জায়গার মধ্যে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ মাটি খুঁড়ে ১৫টি প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শনের সন্ধান পায়। এগুলো হচ্ছে সাতগাছিয়া মসজিদ, ঘোপের ঢিপি কবরস্থান, নামাজগাহ কবরস্থান, গলাকাটা মসজিদ, জোড়বাংলা মসজিদ, মনোহর মসজিদ, জাহাজঘাটা, দমদম প্রতœস্থান, গোড়ার মসজিদ, পীর পুকুর মসজিদ, শুকুর মল্লিক মসজিদ, নুনগোলা মসজিদ, খড়ের দিঘি কবরস্থান, পাঠাগার মসজিদ ও বাদেডিহি কবরস্থান।
১৯৯৩ সাল থেকে শুরু করে কয়েকবছর খুঁড়ে নিদর্শনগুলো মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রতœতত্ত্ব বিভাগ নিদর্শনের এ স্থানটির নাম দিয়েছে ‘শহর মোহাম্মদাবাদ’। কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এসব পঞ্চদশ শতাব্দীর কীর্তি। বারো আউলিয়া, খানজাহান আলী, গাজী কালু চম্পাবতী, গঙ্গারিডিসহ বিলুপ্ত নগরী বারোবাজারের ইতিহাসের শেষ নেই।
১৯৯৩ সালে জোড়বাংলা মসজিদ খননের সময় একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল শাহ সুলতান মাহমুদ ইবনে পুসাইন ৮০০ হিজরি। এ শিলালিপিটি এখানকার প্রতœতত্ত্বের অন্যতম দলিল। এ থেকেই বোঝা যায়, নিদর্শনগুলো প্রায় ৬৫০ বছরের প্রাচীন।
বেশিরভাগ নিদর্শনের পাশে স্বচ্ছ পানির বিরাট বিরাট দীঘি রয়েছে। প্রতিটি নিদর্শনের পৃথক পৃথক ইতিহাস রয়েছে। খননের আগে এখানে বড় বড় ঢিবি, জঙ্গল ছিল। এখনো কয়েকটি মাটির ঢিবি রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এর মধ্যেও একই রকম প্রতœসম্পদ লুকিয়ে আছে। সরজমিন দেখা গেছে, মসজিদগুলোতে মুসল্লিরা নামাজ পড়ছেন। প্রতœতত্ত্ব বিভাগের কিছু কর্মচারী নিদর্শনগুলো দেখভাল করছেন। কিন্তু এখানে কোনো হোটেল, মোটেল, চায়ের দোকান কিছুই নেই।