বার্তাবাংলা ডেস্ক :: কথায় আছে শখের তোলা লাখ টাকা। কিন্তু ঘটনা যদি এমন হয় যে, শখের তোলা মেটাতে এক লাখ হাতি হত্যা করা হয় তাহলে কেমন হবে। সম্প্রতি সেভ দ্য এলিফ্যান্ট নামের একটি বেসরকরি সংস্থার দেয়া তথ্য মতে, চীনের বাজারে হাতির দাঁতের তৈরি পণ্যের বিপুল চাহিদা থাকায় গত তিন বছরে চোরাশিকারীরা প্রায় এক লাখ হাতি হত্যা করেছে। আর এই হাতিদের প্রায় সবই আফ্রিকার। হাতি হত্যার ইতিহাসে গত তিনবছরেই সর্বাধিক সংখ্যাক হাতি হত্যা করা হয়েছে।
প্রকৃতির বাস্তুসংস্থানে হাতির অবদান অনেক। একদিকে হাতি যেমন জলবায়ুর পরিবর্তনের বিষয়টি সবার আগে ধরতে পারে, তেমনি অন্যান্য প্রাণীর খাদ্যসংস্থানের পেছনেও হাতির অবদান আছে। প্রথমদিকে চীনে হাতির দাঁত ব্যবহার করা হতো যৌবন ধরে রাখার মহৌষধ হিসেবে। যদিও পরবর্তী সময়ে এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু তাই বলে কমেনি হাতির দাঁত বিক্রির ধুম। উল্টো হাতির দাঁতকে কেন্দ্র করে একধরনের কুটির শিল্পের প্রচলন হলো চীনে। আর চীনের প্রথাগত নিয়মানুযায়ী, যার ঘরে একটাও হাতির দাঁতের তৈরি আসবাব নেই, তার বাড়িতে ভাগ্যদেবি আসে না। তাই, নিজের বাড়িতে ভাগ্যদেবিকে আমন্ত্রন জানাতে প্রত্যেকেই একটি হলেও হাতির দাঁতের তৈরি আসবাব ক্রয় করার চেষ্টা করেন। যে কারণে অনেক চেষ্টা করেও কমানো যাচ্ছে না হাতির দাঁতের ব্যবহার।
চীন সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি হাতির দাঁত পাচার বন্ধে। তবে স্থানীয় রিপোর্ট অনুযায়ী অবৈধ হাতির দাঁতের সন্ধানে মাঝে মধ্যে চীনা পুলিশ দেশটির বিভিন্ন স্থানে হানা দিলেও, আর্থিক লেনদেনের মধ্য দিয়ে বিষয়টি সুরাহা করা হয়। যেমন, সেভ দ্য এলিফ্যান্টের কর্মীরা চীনের বেইজিং এবং সাংহাইয়ের প্রায় ২৭৫টি খুচরা দোকানে অভিযান চালিয়েছিল। সে অভিযানে দেখা যায়, দোকানে প্রাপ্ত হাতির দাঁতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দাঁতই অবৈধ। যেগুলো ক্রয়ের সময় কোনো রশিদ বা চালান রাখা হয়নি। বেইজিংয়ের ৭৮ শতাংশ হাতির দাঁতের দোকানই অবৈধ, আর সাংহাইয়ের ৮৯ শতাংশ দোকান অবৈধ।
সংস্থাটির প্রধান ডগলাস হ্যামিলটন এবিষয়ে বলেন, ‘চীন যদি হাতির দাঁত কেনাবেচা বন্ধ না করে তাহলে কয়েক প্রজন্মের মধ্যেই আফ্রিকার হাতি শেষ হয়ে যাবে।’ এই যখন অবস্থা তখন কি করছে বিশ্বনেতৃবৃন্দ। জাতিসংঘের প্রাণী সংরক্ষন দপ্তর প্রতিবছরই চোরাশিকারীদের দৌরাত্ম কমানোর জন্য আফ্রিকায় বিভিন্ন প্রকল্প চালু করে। কিন্তু ক্রেতা রাষ্ট্র চীনকে সরাসরি অভিযুক্ত করে কোনো বক্তব্য না দেয়ার কারণে চীনের সরকার অনেকটা এবিষয়ে উদাসীন ভূমিকা পালন করে। যার সুযোগ নেয় চোরাশিকারীরা। বর্তমানে চীনের সবচেয়ে বেশি অবৈধ উপায়ে হাতির দাঁত কেনে। ২০১০ সাল থেকে ক্রমাগত হতির দাঁতের দাম বাড়ছে চীনের বাজারে। ধারণা করা হচ্ছে, আফ্রিকায় ক্রমাগত শিকারের ফলে হাতির সংখ্যা কমে যাওয়ায় চাহিদার সঙ্গে উপযোগিতা মিলছে না। আর উপযোগিতা ধরে রাখার জন্য ব্যবসায়িরা হাতির দাঁতের দাম বাড়াচ্ছে। ২০০২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তের দফায় হাতির দাঁতের দাম বেড়েছে দেশটিতে।