বার্তাবাংলা ডেস্ক :: ১৯১৭ সালে পৃথিবীর প্রতিবাদের ইতিহাসের চাকাকে একধাপ এগিয়ে দিয়েছিল অক্টোবর বিপ্লব। রাশিয়ার জারতান্ত্রিক শাসনপদ্ধতির বিপরীতে দেশটির বলশেভিক পার্টি জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার দাবিতে এক বিশাল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল গোটা রাশিয়া জুরে। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশটিতে কায়েম হয় সমাজতন্ত্র। বিপ্লব মধ্যবর্তী সময়ে গোটা রাশিয়ার অগুনতি কারাগার ফাঁকা করে দিয়েছিল বলশেভিক পার্টির সদস্যরা। জারের আমলে যারা বিভিন্ন কারাগারে বন্দী হয়ে ছিল তারাই পরবর্তীতে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী হিসেবে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেসময় সবচেয়ে কুখ্যাত যে কয়েকটি কারাগার ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল সেন্ট পিটার্সবার্গের ‘ক্রেসতি’ নামক কারাগার। জার আমলে প্রায়দিনই কোনো না কোনো রাজবন্দীকে হত্যা করা হতো এই কারাগারে।
এরপর অনেকটা দিন কেটে যায়। সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভিন্ন টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে এগুতে থাকে। কিন্তু এতোকিছুর মাঝেও টিকে থাকে ক্রেসতি কারাগারটি। বরংচ আগের চেয়েও আরও জমজমাট হয়ে ওঠে কারাগারটি। নূন্যতম অপরাধের সাজা হিসেবে হয় সাইবেরিয়ার কারাগারে নয়তো ক্রেসতি কারাগারে অন্তরীন করা হতো অনেক বন্দীকে। আর এই কারাগারে একবার ঢোকা মানে মৃত্যুর সঙ্গে আলিঙ্গন করা, নয়তো শরীরের কোনো একটি অঙ্গহানি হওয়া। এভাবে একদিন বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ভেঙ্গে টুকরো হয়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। জন্ম হয় সমাজতন্ত্র বর্জিত স্বতন্ত্র রাশিয়ার। কিন্তু নতুন রাশিয়াতেও বহাল তবিয়তে টিকে থাকে ক্রেসতি। এযেন কালের অমোঘ নিয়তি, জাতির ভাগ্যে কলঙ্গের দাগের মতো লেগে আছে।
সর্বশেষ ২০০৬ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ব্যাক্তিগতভাবে ঘোষণা দেন এই কারাগারটি বন্ধ করে দেয়ার। সম্ভাব্য নতুন কারাগারের জন্য গোটা রাশিয়া জুরে জায়গা খোঁজা হয়। কিন্তু অত্যাধুনিক একটি কারাগার বানানোর মতো ভৌগোলিক অবস্থান কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষমেষ সিদ্ধান্ত হয় পুরোনো ক্রেসতি কারাগার বন্ধ করে দিয়ে সেখানেই তৈরি করা হবে অত্যাধুনিক ‘ক্রেসতি-২’ কারাগার। পরবর্তীতে ২০০৮ সাল থেকে কারাগারটি বানানোর কাজ শুরু হয়। বর্তমানে কারাগারটির নির্মান কাজ প্রায় শেষের দিকে। আগামী বছরই চার হাজার কারাবন্দীকে নিয়ে যাত্রা করতে যাচ্ছে ক্রেসতি-২।
জার আমলের কলঙ্ক থেকে অর্ধেক মুক্তি পেল যেন রাশিয়া। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের শ্রম শিবিরের কলঙ্ক এখনও লেগে আছে সেন্ট পিটার্সবার্গের ক্রেসতি কারাগারের দেয়ালজুরে। কারণ এই কারাগারেই সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের অধিকাংশ রাজবন্দী কয়েদ হয়ে ছিলেন। লেনিন আমলে খোদ লিওন ট্রটস্কি পর্যন্ত এই কারাগারে অন্তরীন ছিলেন তার সঙ্গী সাথী সমেত। সম্প্রতি রাশিয়ার কারাগার বিষয়ক বিভাগ মারফত ক্রেসতি-২ কারাগারটির কিছু ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ছবিতে কারাগারটির ভেতরে একটি জাদুঘর, কুস্তি লড়াইয়ের স্থান এবং একটি শরীরচর্চা কেন্দ্র ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য একটি কনসার্ট হল দেখানো হয়েছে।
১৯৯০ সালের দিকেও ক্রেসতি’তে বন্দীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩ হাজার। গত ২০০৮ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রেসতি-২ কারাগারটি পরিদর্শনকালে বন্দীদের খারাপ দশা দেখে নতুন কারাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেসময় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাশিয়ার কারাগারের মান এবং অনুন্নত ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। সেই সমালোচনা বন্ধ করতেই পুতিন দ্রুত পদক্ষেপ নেন। ইউরোপের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কারাগারে একজন বন্দীর জন্য অন্তত সাত বর্গমিটার জায়গা রাখার নিয়ম। দেশটির কারা বিভাগের প্রধান জেনেডি করনেইনকোর বক্তব্য অনুযায়ী নতুন কারাগারটিতে ইউরোপের আইন মেনেই সকল বন্দোবস্ত করা হয়েছে।