বার্তাবাংলা রিপোর্ট :: সমকামী প্রেমের উপন্যাস ‘নীল যমুনার জলে’ নিয়ে তোলপাড় চলছে। বইমেলায় প্রকাশিত এ উপন্যাসটি নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল বিভিন্ন গোষ্ঠী এরই মধ্যে তাদের মতামত দিয়ে বলেছে, বইটি নিষিদ্ধ করতে হবে। সাংবাদিক তৌহিদুর রহমানের লেখা এ উপন্যাসটি নিয়ে অন্য সাংবাদিকরাও তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন ফেসবুকে।
উপন্যাসটি পড়ে জানা গেছে, ‘নীল যমুনার জলে’র কেন্দ্রীয় চরিত্র সোমা। যিনি একজন কলেজ ছাত্রী। আরেকটি চরিত্র রেহানা। তিনি একজন কলেজের শিক্ষিকা। এই দুই চরিত্র ঘিরেই এগিয়েছে উপন্যাসের কাহিনী। এতে দেখানো হয়েছে দু’জন একই প্রকৃতির। তাদের দু’জনেরই কোনো পুরুষের প্রতি টান নেই। কোনো আকর্ষণ নেই। আর কোনো পুরুষের প্রতি তাদের এই আকর্ষণ না থাকাটাই যেন স্বাভাবিক। পুরুষের প্রতি টান না থাকলেও দু’জনের পরস্পরের প্রতি ভীষন টান। একে অপরকে ছেড়ে কেউ থাকতে পারে না। ধীরে ধীরে এক সময় দু’জন দু’জনকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলে। দু’জনে চলার পথে এক সময় বুঝতে পারে আর দশটা মানুষের মতো ওদের জীবন নয়। তাই সিদ্ধান্ত নেয় তারা সারাজীবন একসাথে থাকবে। তবে সামাজিক পারিপার্শি¦কতার কারণে ওরা এক সাথে থাকতে পারে না। একদিন দু’জনেই মালাবদল করে গোপনে বিয়ে করে। তবে সে বিয়ের কথা কেউ জানতে পারে না। ওরা কাউকে জানাতেও পারে না। এভাবেই বয়ে চলে দুই জীবন। লেখক অবশ্য দাবি করেছেন বইটি বাংলা সাহিত্যে প্রথম সমকামী প্রেমের উপন্যাস। তবে প্রথম সমকামী বই না হলেও এই ধরণের উপন্যাস বাংলাসাহিত্যে বিরল। প্রথাবিরোধী এমন উপন্যাস লেখার চিন্তা অনেকেই করতে পারেন না।
লেখক বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে অনেক সমকামি নারী-পুরুষ রয়েছেন। আর থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার জন্যই সমকামী নারী-পুরুষরা এখানে নিজেদের আড়ালে রাখেন। সমকামিতা কোনো প্রকৃতিবিরুদ্ধ আচরণ নয়, বরং খুবই স্বাভাবিক। সেটাই তুলে ধরা হয়েছে এই উপন্যাসে।
বইয়ের ফ্লাপে বলা হয়েছে, বইটি শুধুমাত্র প্রাপ্তমনস্ক পাঠকদের জন্য। লেখকের মনে হয়তো চিন্তা জন্মেছে, শুধুমাত্র প্রাপ্তমনস্ক পাঠকই বইটিকে গ্রহণ করবেন। সাধারণ পাঠক বইটির বিষয়বস্তু গ্রহণ করতে পারবেন না। সেটা হতে পারে। তবে আমাদের ধারণা একদিন দেশের সব পাঠকই হবেন প্রাপ্তমনস্ক পাঠক। বইটি প্রকাশ করে জ্যোতিপ্রকাশ।
নারী আর পুরুষের মধ্যে প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে খুবই স্বাভাবিক। সাধারণত এমনটাই হয়ে থাকে। নারী-পুরুষের নানা ধরণের সম্পর্ক নিয়ে লেখাও হয়েছে অসংখ্য বই। তবে সমলিঙ্গের নারী বা পুরুষের প্রেম ও বিয়ের সম্পর্কের বিষয়টি বাংলাদেশের সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়নি। উপন্যাসটি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে আর্ন মানি অনলাইনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায়ও এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।