বইপড়ুয়া জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে স্থান করে নিতে চলেছে ভারতীয়রা। শীর্ষ বইপড়ুয়া জাতির তালিকায় টানা দুই বছর ধরে প্রথম স্থান অধিকার করে আছে ইন্ডিয়া। ভারতের মানুষ সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা ৪২ মিনিট ব্যয় করে বই পড়ার পেছনে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ওখানে সাক্ষরতার হার কম হলেও যাঁরা মোটামুটি শিক্ষিত, তাঁরা বই পড়ার পেছনে বেশি সময় ব্যয় করেন। এই জরিপ অন্তত সেটাই প্রমাণ করে।
ভারতের পরের অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ড। তারা ব্যয় করেছে ৯ ঘণ্টা ২৪ মিনিট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। চীনের মানুষ বই পড়েছে সপ্তাহে ৮ ঘণ্টা। এই তালিকায় বাংলাদেশের কোনো নাম নেই। তবে তালিকার নিচে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। মার্কিনরা সবচেয়ে কম সময় ব্যয় করেছে বই পড়ার পেছনে— মাত্র ৫ ঘণ্টা ৪২ মিনিট।
বই পড়ার দিক থেকে ব্রিটিশ পুরুষের তুলনায় নারীরা এগিয়ে আছেন। শতকরা ২৭ জন নারী স্বীকার করেছেন, তাঁরা দৈনিক কিছু না কিছু পড়েন। অন্যদিকে, ১৩ শতাংশ ব্রিটিশ পুরুষ দিনে কিছু একটা পড়েন বলে জানিয়েছেন। পড়ার চেয়ে শুনতে পছন্দ করেন ৮ শতাংশ ব্রিটিশ। তাঁরা সাধারণত অডিও বুক শোনেন। কম বয়সীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বই পড়ে জার্মানরা। অনূর্ধ্ব–১৪ বছর বয়সী জার্মান কিশোর-কিশোরীদের ২৮ শতাংশ প্রতিদিন ১৭ মিনিট ব্যয় করে বই পড়ার পেছনে।
২৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন একটিও বই পড়েনা। তবে যেসব মার্কিন বই পড়েন, তাঁরা বছরে গড়পরতা চারটি বই পড়েন। মার্কিনীরা সবচেয়ে বেশি পড়েন বাইবেল। শতকরা ৪৮ জন মার্কিন জানিয়েছেন, তাঁরা বছরে একবার হলেও বাইবেল পড়েন।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের কথা আগেই বলা হয়েছে। তারা সাপ্তাহিক হিসাবে সবচেয়ে বেশি সময় খরচ করে বই পড়ার পেছনে। শিক্ষার হারের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আছে সিঙ্গাপুর। দেশটির সাক্ষরতার হার ৯৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ দেশের মেয়েরাও বই পড়ার দিক থেকে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে। শতকরা ৭৫ ভাগ মেয়ে বই পড়েন, অন্যদিকে ছেলেদের হার ৫৯ শতাংশ।
বাংলাদেশের মানুষ তুলনামূলক কম বই পড়ে। বাঙালির পাঠাভ্যাস নিয়ে তেমন কোনো জরিপ বা গবেষণাই হয়নি। তবে প্রথম আলোর উদ্যোগে ওআরজি-কোয়েস্ট একটি জরিপ করেছিল, যেখানে তরুণদের বই পড়ার হার আগের দুই বছরের চেয়ে সেই বছরে ৬ শতাংশ কমেছে বলে তথ্য উঠে আসে। জরিপের ফল প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছিল।
গত বছর সারা বিশ্বে যতগুলো বই বিক্রি হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে রোমাঞ্চ ঘরানার বই। মোট বিক্রীত বইয়ের এক-তৃতীয়াংশই ছিল রোমাঞ্চ উপন্যাস। এসব বইপড়ুয়ার গড় বয়স ৪২ বছর। তাঁদের মধ্যে ১৬ শতাংশ নারী।
আশার কথা হলো- ছাপা বই খুব সহজে হারিয়ে যাচ্ছে না, দেশের মানুষের পাঠাভ্যাস কমলেও বৈশ্বিক পরিসরে তরুণদের পাঠাভ্যাস বাড়ছে, ছাপা বই, ই-বুক, অডিও বুক ইত্যাদি মিলিয়ে আন্তর্জাতিক বইয়ের বাজার বাড়তে বাড়তে ১১৯ বিলিয়ন ডলার আয়তনে অবস্থান করছে। এটি বেশ আশার কথা। নিশ্চয় বাংলাদেশের মানুষও একদিন বইয়ের ভেতর ডুব দেবে। এটা আশা করা যায়।
সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি বই ছেপেছে চীন। এক বছরে ছেপেছে ৪ লাখ ৪০ হাজার বই। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা ছেপেছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৯১২টি বই। তৃতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য, ছেপেছে ১ লাখ ৮৪ হাজার বই। ভারতের মানুষ বই পড়ার দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও বই ছাপার দিক থেকে খানিকটা পিছিয়েই আছে। তালিকায় ভারতের অবস্থান সপ্তম। তারা গত বছর বই ছেপেছে মাত্র ৯০ হাজার।
সবাই ভেবেছিল করোনাকালে ই-বুকের বিক্রি বাড়বে। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে উল্টো। বরং ছাপা বই-ই বেশি বিক্রি হয়েছে। ছাপা বই থেকে গত বছর বিশ্বের বইয়ের বাজার আয় করেছে ১৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ই-বুক বিক্রি হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। আর ছাপা বইয়ের মধ্যে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল হার্ড কভার ও ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল পেপারব্যাক। বিস্ময়করভাবে অনলাইন বইয়ের দোকান থেকে বই কেনার হার বেড়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় অনলাইনে বই কেনার হার বেড়েছে ২৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৩৩ শতাংশ। তুরস্কে বেড়েছে ৩০ শতাংশ। আর নিউজিল্যান্ডে অনলাইন লাইব্রেরিতে সদস্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।