মো. জাবিহুল আলম ভূঁইয়া :: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নারী ও শিশুদের নানামুখী দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। খাবার সংগ্রহ, অসুখ-বিসুখসহ জীবনযাপনের দিক দিয়ে পুরুষদের তুলনায় নারী-শিশুকে তুলনামূলক বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঘরে থাকার কারণে তারা নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার হয়। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করার অপ্রতুলতাসহ জীবনমানের জন্য ইতিবাচক বিভিন্ন দিক থেকে নারী-শিশুর ভাগ্যে প্রাপ্তি ঘটছে কম।
সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় নারী ও শিশুরাই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিরিক্ত লবণাক্ততার জন্য বর্তমানে খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের অনেক নারীকে লবণমুক্ত খাবার পানি সংগ্রহ করার জন্য মাইলের পর মাইল যেতে। প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার পথ হাঁটতে গিয়ে কষ্ট বাড়ছে তাদের। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে তৈরি জলাবদ্ধতার। জলাবদ্ধ এলাকার ঘরে ঘরে সৃষ্টি হচ্ছে খাদ্য সংকটের। আর এই খাদ্য সংকটের শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ নানাভাবে নারীদের জীবনকে সংকটাপন্ন করে তুলছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের ভালোমতো বেঁচে থাকার অনুষঙ্গগুলোর গুণগত মান খারাপ করে দেয়। ফলে নারী ও শিশুরা নানারকম স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মুখে পড়ে। বৈশ্বিক এই বিপর্যয়ের কারণে মানুষের সুপেয় পানির জোগান কমে যাচ্ছে, পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর আবাসও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। সুপেয় পানি, দূষণমুক্ত বাতাস, পুষ্টিকর খাবার ইত্যাদির মান ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। এতে করে নারী ও শিশুদের ভোগান্তি বাড়ছে।
ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসি) এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও বাড়বে। আগামী ২০ বছরে তা শতকরা ৩২০ ভাগ বাড়বে। এর ফলে বাড়বে শিশুমৃত্যুর হার। আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৭ ভাগ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে, বাড়বে ভূমিক্ষয়। এতে এ সময়ের মধ্যে প্রায় তিন কোটি মানুষ বাস্ত্যুচ্যুত হবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা। দেশে নারী ও শিশুর পরিমাণ প্রায় ৭০ ভাগ। এর মানে হচ্ছে প্রায় দু কোটি নারী-শিশুকে পোহাতে জলবায়ু পরিবর্তনের আঘাতজনিত ঝক্কি-ঝামেলা।
এ প্রসঙ্গে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, নারী ও শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতির শিকার। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। আর এতে নারী ও শিশুরাই তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে নারী ও শিশুদের বাঁচাতে এখনই কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। তা না হলে জাতি হিসেবে আমরা দুর্বল হয়ে বেড়ে ওঠবো। কারণ সুস্থ-সবল মা ও শিশুই আমাদের ভবিষ্যত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় মালদ্বীপ ও টুভালুর পরেই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে কিরিবাতি, কোস্টারিকা এবং বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পরিবেশ দূষণসহ পানি দূষণের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডায়রিয়া, কলেরা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগের প্রকোপ বেড়ে গেছে। উষ্ণ আবহাওয়ায় মশা, মাছি ও কীট-পতঙ্গবাহী রোগের বিস্তার ঘটছে বেশি।
অন্যদিকে সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বে প্রতিবছর ১৭ কোটি ৫০ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ডায়রিয়া, অপুষ্টিজনিত নানারকম রোগ ও ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আর এসব রোগের শিকার হচ্ছে প্রধানত শিশুরা। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কেবল ভারতেই প্রতিবছর পাঁচ বছর অথবা এর চেয়ে কম বয়সী প্রায় ২০ লাখ শিশু নানা রকম রোগে মারা যাচ্ছে। ভারতে শিশুমৃত্যুর এই হারকে বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক বলে উল্লেখ করা প্রতিবেদনে।