শারমিন আরা :: সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর নানামূখী উদ্যোগের কারণে যক্ষ্মা নিরুপণ ও চিকিৎসায় আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। আর এ সকল কার্যক্রম জোরালো হওয়ার কারণে গ্রামের সাধারণ মানুষও জানে কোথায় গেলে যক্ষ্মার চিকিৎসা হয়। ২০১১ সালে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রন কর্মসূচির মাধ্যমে ১,৫৫,৫৬৪ জন যক্ষ্মা রোগী সনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে কফে যক্ষ্মা জীবাণুযুক্ত রোগীর সংখ্যা ৯৮,৯৪৮ জন (সনাক্তকরণের হার ৬৫ প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায়)। ২০১০ সালে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে সনাক্তকৃৃত ৯২% (৯৬,৮০৭ জন) রোগী আরোগ্য লাভ করেছে । যা সহস্রাব্দ লক্ষ্য-৬অর্জনে আরো একটি মাইলফলক।
সরকারি তথ্য মতে, ২০১১ সালের পরিসংখ্যান আনুযায়ী, দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৬৪ জন। তবে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় ২০১১ সালে যক্ষারোগী কমেছে। ২০০৯ সালে কফে জীবাণুযুক্ত যক্ষারোগীদের ৭৪ শতাংশ, ২০১০ সালে ৭০ শতাংশ শনাক্ত হয়। ২০১১ সালে এ হার ৬৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। এই সাফল্যের মধ্যে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি যৌথ কর্মসূচীর অন্যতম অর্জন দেশব্যাপী ডটস (DOTS) পদ্ধতি সম্প্রসারণ। বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে যক্ষ্মা রোগের ঔষধ বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে ১৯৬৫ সাল থেকে টিবি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলিতে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা পরিকল্পনায় Mycobacterial Disease Control (MBDC) Directorate of the Directorate-General of Health Services (DGHS) এর অধীনে ১২৪টি উপজেলায় এই কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করা হয়। ১৯৯৩ সালের দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে গ্লোবাল এমার্জেন্সী ঘোষণা করে। তখন সরকার চতুর্থ স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃতি প্রাপ্ত ডট্স (Directly Observed Treatment Shortcourse) পদ্ধতি গ্রহন করে।
সূত্র মতে, বাংলাদেশে সুষ্ঠুভাবে ডট্স (DOTS) পদ্ধতি কার্যকর করার জন্য ১৯৯৪ সালে সরকার এবং কিছু বেসরকারি সংস্থার মধ্যে একটি অঙ্গীকারনামা (MOU) স্বাক্ষর করা হয়। বর্তমানে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে ব্র্যাক ও মোট ৪২ টি বেসরকারি সহযোগী সংস্থা একযোগে কাজ করছে। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা এবং ৪৮৮টি উপজেলায় মোট ১০৫৬ টি ল্যাবরেটরী, ৪০ ইকিউএ (External Quality Assessment -EQA) ল্যাবরেটরী স্থাপনের মাধ্যমে এই সমন্বিত কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সরকার যক্ষ্মারোগের ব্যবস্থাপনার জন্য গাইডলাইন প্রনয়ন ও সরবরাহ, টেকনিক্যাল ও টিওটি প্রশিক্ষণ, ওষুধ, ইকুইপমেন্ট ও অন্যান্য দ্রব্যাদি ক্রয় ও বিতরণের ব্যবস্থা করে থাকে। তাছাড়া কর্মসূচী সমন্বয়, মনিটরিং ও মূল্যায়ন করে থাকে। বেসরকারী সংস্থাগুলি নিজ নিজ কর্ম এলাকায় সম্ভাব্য রোগী সনাক্তকরণ, রোগ নির্ণয়, সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান, ফলোআপ, ল্যাবরেটরী স্থাপন ও পরিচালনা, স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং স্থানীয় সুপারভিশন ও মনিটরিং করে থাকে।
ড এনটিপি’র ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কনসাল্টেন্ট ডা. মো. মুজিবুর রহমান জানান, বিশে^ যক্ষাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ। ২০১১ সালে সারাদেশে মোট এক লাখ ৪৮ হাজার ১৯৬ জন যক্ষ্মারোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে শিশুদের মধ্যে ফুসফুস বহির্ভুত যক্ষায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
সরকারের পাশাপাশি সরকারের যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমসূচীর (এনটিপি) সাথে ব্র্যাকসহ মোট ৪৩টি প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ল্যাবরেটরি কার্যক্রম জোরদারকরণ, কর্মসূচি মূল্যায়ন, সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, কেন্দ্রিয় পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায়ে ওষধ সামগ্রি পরিবহন, স্থানীয় পর্যায়ে মজুদ ও নরবরাহ নিশ্চিত করা, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ল্যাবরেটরি স্থাপন ও পরিচালনা করা, স্থানীয় পর্যায়ে অবলোকন ও তত্ত্বাবধান করা, সহযোগি ও দাতা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করা।
এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচীর সহযোগী পরিচালক ড. আকরামুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে এমডিজি-৬ অনুযায়ী যক্ষ্মারর প্রকোপ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে কার্যত্রক্রম জোরদার করতে হবে। সে লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সমন্বিত কর্মসূচির দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি দরিদ্র যক্ষ্মা রোগীদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার জন্য সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, সরকার ইচ্ছা করলে বেসরকারি পর্যায়ে সীমিত মুনাফা বেঁধে দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করতে পারে।
মন্তব্য যুক্ত করুন