বার্তাবাংলা রিপোর্ট :: বিগত কয়েক বছর যাবত পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আকস্মিকভাবে সৃষ্টি হচ্ছে গভীর খাদ। হঠাৎসৃষ্ট এসকল খাদ দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ১ মিটার থেকে ২০০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে আসছে মুখরোচক সব সংবাদ। মানুষের মনে ক্রমশ দানা বাঁধছে শঙ্কা।
ভূ-ভাগে অকস্মাৎ সৃষ্ট বিরাটাকার এসব গর্তকে ইংরেজিতে বলা হয় সিংকহোল। যে ভূমির ওপর মানুষ হেঁটে বেড়াচ্ছে, তা মাটির অসংখ্য স্তরের সবচেয়ে ওপরের স্তর। ওপরের স্তরসহ ধারাবাহিকতা রেখে নিচের স্তরগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকলে হঠাৎ সৃষ্টি হতে পারে এসব সিংকহোল। সিংকহোল দুই প্রক্রিয়া সৃষ্ট হতে পারে। কার্স্ট প্রক্রিয়া, সাফোশান প্রক্রিয়া।
ভূভাগের উপরস্থ মাটি যদি চুনাপাথর, ডলোমাইট এবং জিপসামে তৈরি পাথুরে মাটি হয়ে থাকে, এবং ঐ অঞ্চলের ভূ-ভাগ যদি নিয়মিত বিরতিতে এসিড বৃষ্টির শিকার হতে থাকে, তবে সেখানে কার্স্ট প্রক্রিয়ায় সিংকহোল তৈরি হতে পারে। উল্লেখকৃত উপাদানে তৈরি পাথরগুলো দীর্ঘদিনের জলস্পর্শে ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে একসময় স্থিতি হারিয়ে ফেলতে পারে। যা খুব সহজেই সংলগ্ন স্তরগুলোরও ক্ষতিসাধন করে। একসময় ওপরের চাপ সইতে না পেরে টেঁসে যায়। অনেক পাহাড় সুড়ঙ্গ বা গুহাও এ পদ্ধতিতে সৃষ্ট হয়েছে।
সাফোশন প্রক্রিয়ায় বেশি সংখ্যক সিংকহোল তৈরি হয়ে থাকে। যেসকল স্থানে বেলেমাটির তুলনামূলক আধিক্য দেখা যায়, সে সকল স্থান সাফোশনের ঝুঁকিতে পরিপূর্ণ। এঁটেল ও দোঁআশ মাটি এ ঝুঁকি থেকে মুক্ত অনেকটাই। সাধারণত বেলেমাটি গঠিত ভূভাগে প্রচুর ফাটল সৃষ্টি হয়। এ ফাটলপথে দীর্ঘদিন ধরে জল প্রবেশ করতে থাকলে একসময় অভ্যন্তরীণ ভূভাগ ক্রমশ দ্রবীভূত হয়ে যেতে ধাকে। এ অবস্থায় আকস্মিক ধস নামতে পারে। তৈরি হতে পারে সিংকহোল।
সবাই জানেন, রহস্যময় প্রকৃতির যে কোন ঘটনা তার শেকল ধরে এগিয়ে দূরবর্তী কিংবা নিকট ভবিষ্যতের ঘটনাবৃক্ষ জন্ম দেয়। সিংকহোল সৃষ্টির প্রধান কারণ দুটো খুবই সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা হলো, এর শেকল ধরে ভবিষ্যতে সামনে চলে আসতে পারে আরও রহস্যময় প্রাকৃতিক ঘটনার উদাহরণ। আগ্রহী পাঠক সিংকহোলের বিষয়ে আরও জানতে চাইলে অন্তর্জালেই এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি খুঁজে পাবেন।
এবার এ লেখার শিরোনামের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আবারও। পৃথিবীর জ্ঞাত অজ্ঞাত অসংখ্য স্থানে দিনে দিনে আত্মপ্রকাশ করছে অসংখ্য সিংকহোল। অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলে ভূভাগের উপরিস্তরের ক্ষয় ও অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়নের উপজাত হিসেবে সৃষ্ট এসিড বৃষ্টি, এ দুটি ব্যাপার রোধ করা গেলে হয়ত আকস্মিক এ দুর্যোগ থামানো যেতে পারে। নয়ত ক্রমশ তা আরও বড় দুঃস্বপ্নের পথ পরিষ্কার করবে।