বার্তাবাংলা ডেস্ক :: যুক্তরাজ্যের ডিটেনশন সেন্টারে বাংলাদেশি যুবক রুবেল আহমদের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রুবেলের মৃত্যু নিয়ে কমিউনিটিতে কানা ঘুষা চলছে। কেউ কেউ বলছেন পুলিশ বাড়াবাড়ি করেছে। বর্ডার গার্ড ও স্পেশাল এজেন্টরা ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটির মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে ব্রিটেনে আত্মীয়, পরিজনদের অবৈধভাবে না আনার জন্য নিরুৎসাহিত করতে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে। আবার কেউ কেউ ডিটেনশন সেন্টারের ভেতরে নানা দেশের নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের মিশ্রণে অনভিপ্রেত ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথাও বলছেন। আবার অনেকেই জোরালোভাবে বলছেন বর্ডার ইন্টেলিজেন্স ইউনিট অত্যন্ত সুচতুরতার সঙ্গে রুবেলকে তাদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করেছে। হতভাগ্য রুবেল যেভাবে মারা যাক না কেন ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ। কমিউনিটির নানা অংশ ও বিভিন্ন সংগঠন রুবেলের মৃত্যুর কারণ তদন্ত ও বিচারের দাবিতে এখন সোচ্চার। রুবেলের মৃত্যুর পর থেকে লন্ডনসহ সমগ্র ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সভা-সমাবেশ হচ্ছে। ইতিমধ্যে জাস্টিস ফর রুবেল, গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল-জিএসডিসি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠন লন্ডন সিটিতে বিক্ষোভ করেছে। তারা রুবেলের মৃত্যুর তদন্তের দাবি জানানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত অপরাধী কেউ থাকলে তাকেও খুঁজে বের করার জন্য পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানিয়েছেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে শহীদ আলতাব আলী পার্কে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন যুক্তরাজ্য শাখার উদ্যোগে রুবেলের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নিরাপত্তা হেফাজতে রুবেলের এমন মৃত্যু হেফাজতে থাকা অবস্থায় ব্যক্তির প্রতি অবহেলা, অমানবিক আচরণ, কর্তব্যে অবহেলা, প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতা চালিয়ে ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটিকে আতঙ্কগ্রস্ত করা এবং সেই সঙ্গে বর্ণবাদের মতো গুরুতর প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। রুবেলের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং হেফাজতে থাকা সকল বন্দীর প্রতি মানবিক আচরণ ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুব ইউনিয়নের সভাপতি জোবাইদা নাসরীন, সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বিন আলী, যুব ইউনিয়নের নেতা আহসান হাবীব সোহেল, সুশান্ত দাস প্রশান্ত, সিপিবির যুক্তরাজ্যের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এনামুল ইসলাম, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক রবিউল হক লেনিন, আনসার আহমদ উল্লাহ, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা আবিদ আলী, নাট্য নির্দেশক স্মৃতি আজাদ, অজন্তা দেব রায়, জামাল খান, আখতার সোবহান মসরুর, আমান উদ্দিনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, ছাত্র-যুব সংগঠন এবং আইনজীবীরা। গত শুক্রবার পুলিশ পরিবার-পরিজনের কাছে রুবেলের লাশ হস্তান্তর করলে ইস্ট লন্ডন মসজিদে বাদ জুমায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শত শত প্রবাসী অংশ নেন। রুবেলের আত্মীয় আজমল আহমেদ জানান, রুবেলের লাশ দাফনের জন্য আগামী বুধবার তার দেশের বাড়ি বিশ্বনাথে পাঠানো হচ্ছে। রুবেলের মৃত্যুর প্রতিবাদে ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ‘রুবেলের বিচার ক্যাম্পেইন’-এর উদ্যোগে ২৩ সেপ্টেম্বর লন্ডনে হোম অফিসের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্যাম্পেইনাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ব্রিটেনের সব শহর ও শহরতলীতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যোগাযোগ করছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংস্থা ‘জাস্টিস ফর রুবেল’ ব্যানারে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিদিনই এখন লন্ডনে এ নিয়ে কোনো না কোনো গ্রুপের প্রতিবাদ কর্মসূচি থাকছে। রুবেলের মৃত্যুর পরে বাংলাদেশ হাইকমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল তারা যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। এরপর হাইকমিশনের পক্ষ থেকে আর কিছু জানানো হয়নি।
মন্তব্য যুক্ত করুন