মো. মাহমুদুল হাসান, (বন) জার্মানি থেকে :: ডয়চেভেলের পুরস্কার পেলেন চট্টগ্রামের সন্তান কম্পিউটার বিজ্ঞানী ড. রাগিব হাসান। দ্য বেস্ট অব ব্লগস (ববস) প্রতিযোগিতায় ‘সেরা উদ্ভাবন’ বিভাগে ‘জুরি’ এবং ‘পিপলস চয়েস’ বাংলাব্রেইল প্রকল্পকে পুরস্কৃত করা হয়। তিনি ওই প্রকল্পের সমন্বয়কারী।
এর আগে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম। জার্মানির বন শহরে সোমবার শুরু হওয়া এ সম্মেলন চলবে আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত। এ সম্মেলনে বিশ্বের ১৩০টি দেশ থেকে প্রায় আড়াই হাজার মিডিয়াকর্মী ও গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ অংশ নিয়েছেন। টানা সপ্তমবারের মতো আয়োজিত এ সম্মেলনের শুরুর দিনই মিডিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে গঠনমূলক বিতর্কে পুরো অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলেন মিডিয়া-বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন গণমাধ্যম ও প্রিন্ট মিডিয়ার ভূমিকা, আন্তর্জাতিকীকরণ, অর্থায়ন ইত্যাদি বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন বক্তারা। কেউ কেউ ‘নিউ মিডিয়া’র গুণগান গাইলেও অন্য বক্তারা ট্র্যাডিশনাল মিডিয়ার পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। বক্তারা বলেছেন, নিউ মিডিয়ার সবচেয়ে বড় যে অসুবিধা তা হলো, তথ্যগুলো ভেরিফাইড থাকে না। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্যকে কাজে লাগাতে পারেন এবং এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনার সুযোগ পান মূলধারার সাংবাদিকরা।
রাগিব হাসান যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা ইন বার্মিংহামের সহকারী অধ্যাপক। মূলত তার নেতৃত্বে একদল স্বেচ্ছাসেবী এই অনলাইন প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের কয়েক হাজার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য ব্রেইল এবং অডিও বুক তৈরি করায় এ পুরস্কার দেওয়া হয়। জার্মানির স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টার কিছু পরে পুরস্কার হিসেবে তাকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে ডয়চেভেলে।
প্রসঙ্গত, গত বছর রাগিব হাসানের অনলাইন ভিডিওভিত্তিক দূরশিক্ষণ উদ্যোগ শিক্ষক ডট কম ববসের জনপ্রিয় পুরস্কার পেয়েছিল। এর আগে এ উদ্যোগটি গুগলের রাইজ অ্যাওয়ার্ডও পায়।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এমন একটি অনন্য উদ্যোগ এবং পুরস্কার প্রাপ্তি প্রসঙ্গে বাংলাব্রেইল প্রকল্পের সমন্বয়ক রাগিব হাসান বার্তাবাংলাকে বলেন, ডয়চেভেলের এই পুরস্কার জয় করার পর বাংলাব্রেইলের কথা আরও অনেকে জানবে, আমরা আরও কর্মী পাবোÑ সেটি ভাবতেই ভালো লাগছে। সর্বোপরি এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাটির প্রতি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে এই পুরস্কারটি বিশাল ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এটি ব্যবহার করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা উপকৃত হলেই তার এ উদ্যোগটি সফল হবে বলে মন্তব্য করেন কম্পিউটার বিজ্ঞানী রাগিব হাসান।
সম্মেলন শুরুর পর ‘ফিউচার অব জার্নালিজম’ শীর্ষক মিডিয়া সামিটে বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক জেফ জার্ভিস, ডয়চেভেলে’র মহাপরিচালক পিটার লিমবার্গ, আলজাজিরা ইংরেজি বিভাগের পরিচালক (সংবাদ) সালাহ নেগাম, মিডিয়াকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান এক্সেল স্প্রিঙ্গারের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ম্যাথিয়াস ডফনার, প্রসার ভারতীর সিইও জওহার সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক সংস্থা ডয়চেভেলের মহাপরিচালক টিম লিমবার্গ। উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন মিসরের জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক বাসেম ইউসুফ।
পরে মিডিয়া সামিটে নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেফ জার্ভিস বলেন, সাংবাদিকতার ভবিষ্যত হচ্ছে জনগণ। কারণ সাংবাদিকতার ধরণ প্রতি মুহূর্তে পাল্টে যাচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে চ্যালেঞ্জও। সাংবাদিকরা এখন আর গেটকিপারের ভূমিকায় নেই। বিতর্ক থাকলেও বিকল্প মাধ্যমগুলো সাংবাদিকতার প্রকার পাল্টে দিচ্ছে।
ড. ম্যাথিয়াস ডফনার বলেন, সারা বিশ্ব জুড়েই সাংবাদিকতা সংকটের মুখে। এ জন্য চাই একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী আর্থিকব্যবস্থা। তবে এটা সত্য যে নতুন নতুন প্রযুক্তি থেকে সুবিধা পাচ্ছে মিডিয়া। অনলাইন গণমাধ্যমের সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনলাইন গণমাধ্যম অত্যন্ত ‘ইনসাইটফুল’। এ মাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের সম্পাদকীয় ডেডলাইনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।
সমাজে সাংবাদিকতা এবং ইন্টারনেটের ভূমিকার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে টিম লিমবার্গ বলেন, সমাজের জন্য ভালো সাংবাদিকতা প্রয়োজন। আর এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা, দক্ষতা এবং দায়িত্বশীলতা। সোশ্যাল মিডিয়া সাংবাদিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি টুলস। তিনি বলেন, ডয়চেভেলে ৩০টি দেশের ভাষার সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এর ব্যবহারকারীরা যেসব পোস্ট দেন তা থেকে অনেকসময় ভালো ভালো স্টোরি বের হয়ে আসে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্বকে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই।
আজ ডিজিটাল যুগে রাজনৈতিক গণমত তৈরি শীর্ষক আলোচনাসহ অন্তত ২০টি সেশন অনুষ্ঠিত হবে এবারের গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে। আগামীকাল শেষ হবে সম্মেলন।