>> আল-কায়েদার কথিত অডিও প্রচার করেছে এই সংগঠনটি
>> সহযোগিতা করছে ‘বাব-উল-ইসলাম’, ‘আনসার আল মুহাহিদীন’ ও ‘আল ফাতাহ’
মো. মাহমুদুল হাসান :: আন্তজার্তিক জঙ্গি নেটওয়ার্ক আল-কায়েদার নামে কথিত যে অডিও-ভিডিও নিয়ে তোলপাড় চলছে তা ছড়িয়েছে জঙ্গিদের নতুন সংগঠন ‘দাওয়াহ্ ইল্লাল্লাহ্’। বছর দুয়েক ধরে ‘সচেতনতামূলক’ কার্যক্রম চালালেও মাস ছয়েক ধরে, বিশেষ করে গত বছরের ৫ মে’র পর থেকে আটঘাট বেঁধে নেমেছে সংগঠনটি। আন্তর্জাাতিক যোগাযোগ রক্ষা করে বাংলাদেশে গত তিন মাস ধরে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়েছে সংগঠনটি। এখন পর্যন্ত মাঠে সরাসরি কোনো ধরনের ‘অপারেশনে’ না গেলেও অনলাইনকেন্দ্রিক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে দাওয়াহ্ ইল্লাল্লাহ্।
সূত্র জানায়, দাওয়াহ্ ইল্লাল্লাহ্কে সহযোগিতা করছে ‘বাব উল ইসলাম’, ‘আনসার আল-মুহাহিদীন’ ও ‘আল ফাতাহ’ নামে আরো তিনটি সংগঠন। আইমান আল-জাওয়াহিরির নামে ইউটিউবে যে ভিডিওর কথা গণমাধ্যমে শনিবার প্রকাশ পায় তা ‘ইসলামের আলো’ নামে একটি চ্যানেলের মাধ্যমে ছড়িয়েছে ‘দাওয়াহ্ ইল্লাল্লাহ্’। জামাত-শিবিরসহ হিযবুত তাহরীরের কিছু নেতাকর্মীর পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ওই সংগঠনটি চলছে বলে গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে। ছাত্রশিবিরের একটি সূত্রও জানিয়েছে, তারা বসে নেই। সরকারের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ঘোষণার জন্য তাদের প্রস্তুতি চলছে। হাইকমান্ডের নির্দেশ পেলেই মাঠে নামবে তারা।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ওই সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছে হারুণ ইজহার, সাজ্জাদ হোসেন, নূরুল করিম নূরী, নূরুল আলম, মো. শরীফ নামের কয়েকজন তরুণ। এরা সবাই মাদ্রাসার সাবেক ও বর্তমান ছাত্র। নেতাদের কেউ কেউ অবস্থান করছেন মধ্যপ্রাচ্যে। দুয়েকজন আছেন চট্টগ্রামে। বাকিরা আছেন ঢাকায়। ‘রংধনু’ ছদ্মনামে একজনের অবস্থান নোয়াখালীতে।
দেখা গেছে, ওয়ার্ডপ্রেসের ফ্রি ডোমেনে সংগঠনের নামে একটি সাইট বানিয়ে সেখানে অসংখ্য ভিডিও-অডিও আপলোড করা হয়েছে। আল-কায়েদা প্রধান আইমান আল-জাওয়াহিরির নামে বাংলা, ইংরেজি ও আরবিতে ‘জিহাদি ডাকে’র অসংখ্য ভিডিও-অডিওসহ কথাবার্তা রয়েছে সেখানে। দাওয়াহ্ ইল্লাল্লাহ্ নামের সংগঠনের ওয়েবসাইট (https://dawahilallah.wordpress.com) ঢুকে দেখা যায়, জাওয়াহিরির যে বক্তব্যটি প্রচার করা হয়েছে সেটি ‘বালাকোট মিডিয়া’র তৈরি বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। জাওয়াহিরিসহ বিভিন্ন ধর্মীয় নেতার নামে সাইটটিতে রয়েছে নানান ‘মেসেজ’। রয়েছে জিহাদের দিকনির্দেশনাও। পিডিএফ আকারে জিহাদের দিকনির্দেশনা আপলোড করা হয়েছে। ওই সাইটটির পেছনে শক্তিশালী একটি টিম কাজ করছে তা সেটির কন্টেন্টগুলো দেখে সহজেই অনুমেয়। সাইটটিতে প্রশ্নোত্তর, নানা ধরনের ফতোয়া, বইপত্র, পোস্টার, অডিও-ভিডিওসহ রয়েছে প্রচুর কন্টেন্ট রয়েছে। জঙ্গি নেতা ওসামা বিন লাদেন ও আইমান আল জাওয়াহিরির প্রচুর ছবির পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের কথাও রয়েছে সেখানে। রাজধানীর শাপলা চত্বরে গত বছরের ৫ মে’কেন্দ্রিক আন্দোলন এবং এর তাৎপর্যও তুলে ধরা হয়েছে সাইটটির বিভিন্ন পোস্টে। সাইটগুলোতে তলোয়ারসহ ভারি অস্ত্রশস্ত্রের ছবিও রয়েছে।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন সিনিয়র কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, নতুন কয়েকটি সংগঠন অনলাইনকেন্দ্রিক প্রচারণা চালাচ্ছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। আমরা সরকারের উর্ধ্বতন মহলে তা জানিয়েছি।
জানা গেছে, দাওয়াহ্ ইল্লাল্লাহ্র একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। আছে ফেসবুক পেজও। পেজটি প্রতিদিনই আপডেট করা হচ্ছে। গুগল প্লাসেও তারা সক্রিয়। ‘ইসলামের আলো’ নামে চ্যানেলটিতে (http://www.youtube.com/user/islameralo/videos) ১৭০টি ভিডিও রয়েছে। ইসলামের আলো নামেও (http://islameralo.wordpress.com) পৃথক একটি সাইট রয়েছে তাদের। ওই সাইটেও একই ভিডিও রয়েছে, যেসব আছে দাওয়াহ্ ইল্লাল্লাহ্র সাইটে।
দাওয়াহ্ ইল্লাল্লাহ্র ফেসবুক পেজে গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে (https://www.facebook.com/pages/Dawah-ilallah/747171925297633) একটি পোস্টে দেশের সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, গোয়েন্দাদের জ্ঞান-বুদ্ধি নিয়ে তিরস্কার করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘আমি বুঝি না, এদেশের সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং গোয়েন্দা সংস্থার মাথায় কী আছে? শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ এর এই বক্তব্য কীভাবে আসলোÑ এটা বের করতে নাকি এদের ২/৩ দিন সময় লাগবে? এর আগে দুই সপ্তাহ সময় ধরে এটা জানতোই না যে, শাইখ এর বক্তব্য বের হয়েছে!! এই নাকি ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল সাংবাদিক!!! মুখে বড় বড় কথা, কাজের নামে কিছুই নাই!! সারাদিন বিভিন্ন “চেতনার জাবর কাটে” কিন্তু মাথায় বিন্দুমাত্র ঘিলু নেই। এই বলদগুলো এটাও জানে না যে, তানজীম আল কায়েদার মেসেজগুলো আল-ফজর কিংবা আস্-সাহাব মিডিয়া এর পক্ষ থেকে আল-ফিদা, শুমুখ আল ইসলামী, আল আনসার (আরবী ও ইংরেজি) ফোরামে প্রকাশিত হয়।’
দাওয়াহ্ ইল্লাল্লাহ্র ফেসবুক পেজটি গত বছরের ৬ নভেম্বর খোলা হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পেজটিতে লাইকের সংখ্যা ছিলো ১৮শ ৮৯। এছাড়া ১৫৯ জন আলোচনায় অংশ নিয়েছেন পেজের পোস্টের ওপর। আর ইসলামের আলো নামের ইউটিউব চ্যানেলটিতে প্রথম ভিডিও আপলোড করা হয় ২০১১ সালের ১ আগস্ট। শেষ ভিডিওটি আপলোড করা হয় চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি। সেটিতে লাদেনের ‘বার্তা’ রয়েছে। ওই চ্যানেলেই জাওয়াহিরির ভিডিও আপলোড করা হয়েছে, যেটি নিয়ে এখন দেশ-বিদেশে তোলপাড় চলছে।
অন্যদিকে মঙ্গলবারও দাওয়াহ্ ইল্লাল্লাহ্-র পেজবুক পেজে বলা হয়, ‘বিআরটিসিতে (প্রকৃতপক্ষে বিটিআরসি) যদি একটা ছাগলকেও বসানো হতো, তাহলেও মনে হয় এই রকম হাস্যকর ব্যাপার ঘটতো না। ‘ওদের বাবা’ আমেরিকান কাফিরদের রিসার্চ / এনালাইসিস সাইটকে (jihadology dot net) মনে করছে – জিহাদী সাইট !!!!! আর এদেশের মুজাহিদীনদের সাইটগুলো ওরা চেনেই না !!! এক ছাগল ডাক দিতেই চেতনার আলোর সাংবাদিক ছাগলটিও সমস্বরে চিৎকার করেছে!!! আসলেই মাঝে মাঝে প্রশ্ন মনে জাগেঃ “ছাগল কি গাছে ধরে?” না হলে এই দেশে এত ছাগল আসে কোথা থেকে!! এই ছাগলপাল নিয়ে কি মুরতাদ বাহিনী যুদ্ধ করবে, তানজীম আল কায়েদার মুজাহিদীনদের সাথে? নিশ্চয়ই মুজাহিদীনদের উপর আল্লাহ বড় মেহেরবান।’