মো. মাহমুদুল হাসান, ইউরোপ থেকে ফিরে :: দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশীরা। দেশের খবর জানতে প্রতি মুহূর্তেই তারা চোখ রাখছেন টিভির পর্দায়। কেউবা অনলাইন পত্রিকার পাতা খুলে বসে থাকছেন সর্বশেষ খবরের আশায়। কেবল উদ্বিগ্ন হয়েই বসে নেই প্রবাসীরা। দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন এবং যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচনকেন্দ্রিক সমঝোতারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তাদের মন্তব্য, ক্ষমতায় যে-ই আসুক তাতে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমরা চাই দেশ নির্বিঘ্নে চলুক। সংঘাত, হানাহানি আমরা দেখতে চাই না। ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ও ইতালিসহ ইউরোপের ৭-৮টি দেশের প্রবাসীরা এমনটিই জানিয়েছেন বার্তাবাংলাকে।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের পন্টিন এলাকায় সপরিবারে বসবাস করেন ইঞ্জিনিয়ার কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া। রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা যারা দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকি তাদের চাওয়া-পাওয়ার খুব বেশিকিছু নেই। আমরা চাই দেশ সবসময় ভালো চলুক। দেশের মানুষ ভালো থাকুক। রাজনৈতিক হানাহানি আমরা দেখতে চাই না। আমার স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা সারাক্ষণ দেশের খোঁজখবর রাখে। আমরা সবসময়ই খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি।
কেবল ইঞ্জিনিয়ার কল্যাণ বড়ুয়াই নন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশীরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। অগ্নিদগ্ধ মানুষের ছবি দেখে অশ্রুসজল তারা। বীভৎস ছবি দেখে আঁতকে উঠছেন তারা। ইউরোপের মানবিক আর উন্নত সমাজের এসব বাসিন্দা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চিত্র দেখে রীতিমতো ক্ষুব্ধ।
জার্মানির রাজধানী বার্লিনের পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন মঞ্জুর মোর্শেদ স্মরণ ও সিজান মাহমুদ। ২-৩ বছর ধরে তারা থাকেন জার্মানিতে। পড়াশোনার ফাঁকে খণ্ডকালীন কাজও রয়েছে তাদের। তাই ইউরোপের গতিময় জীবনে পেছনে তাকানোর সময় নেই। তবু দেশ নিয়ে ভাববার জন্য যেন প্রতিদিনই একটা সময় বরাদ্দ থাকে। জার্মানি আর বাংলাদেশের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কী— এমন প্রশ্ন করতেই কিছুটা তাচ্ছিল্যভরা কণ্ঠে সমস্বরে বলে ওঠেন— এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো দল নেই! বাংলাদেশের অনেক অর্জন আছে। কিন্তু রাজনৈতিক হানাহানির কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের মতো সবসময় আমরাও উদ্বিগ্ন থাকি। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশের অবস্থান আরো নড়বড়ে হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন নজরুল ইসলাম ও আতিক। তারাও জানালেন নিজেদের উদ্বেগের কথা। বলেন, দেশের স্বার্থেই একটি সমঝোতা খুব প্রয়োজন। নির্বাচনে সব দল না এলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই যেভাবেই হোক দেশের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে সব দলকে নির্বাচনে যেতে হবে। নির্বাচনে প্রধান দলগুলো অংশ না নিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। সংঘাত আরো বাড়বে। তাই বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা ভীষণ উদ্বিগ্ন।
বেশ কবছর আগেই ইতালির নাগরিকত্ব পেয়েছেন চট্টগ্রামের সন্তান রেজাউল করিম। তিনি বলেন, এখন যেভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে তাতে বাংলাদেশকে আমার নিজের দেশ বলে মনে হয় না। যাদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে তারা কি বাংলাদেশের মানুষ নন? তারা কি আমাদের শত্রু? যতোদূর জানি, যারা আক্রোশের শিকার হচ্ছেন তাদের সবাই সাধারণ মানুষ। তাদের তো কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের কেন পুড়িয়ে মারা হচ্ছে? তিনি বলেন, আমরা শিগগিরই এ অবস্থার উন্নয়ন চাই। সাধারণ মানুষ কেন রাজনৈতিক হানাহানির শিকার হবে। রাজনৈতিক দলগুলো মিলে একটা সমঝোতায় পৌঁছুক, আমরা তা-ই চাই।