এম. এম. বাদশাহ্, কুমিল্লা সীমান্ত ঘুরে এসে :: মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪৬ লাখ মানুষ মাদক সেবন করে। আর এক লাখের বেশি মানুষ মাদক ব্যবসায় জড়িত। সংখ্যাতাত্বিক জরিপে যা-ই দেখা যাক না কেন, প্রকৃত পক্ষে এই মাদকের বিরুপ প্রভাবে প্রতিবছর পাচার হচ্ছে দেশের ১০ হাজার কোটি টাকা। সীমান্তের ৫১২ টি পয়েন্ট দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে আসছে ৩২ প্রকারের মাদক। যা সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কখোনো মসলা, শস্যবীজ, চায়ের প্যাকেট আবার কখনো বালিশ, তোষক কিংবা বাশের মধ্যে সীমান্ত পাড় হয়ে আসছে । ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা এসব হেরোইন, ইয়াবাসহ বিপুল পরিমাণ মাদকের কারনে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের যুবক ও কিশোর’রা। ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কুমিল্লা অংশে প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার যায়গায় কাটাতারের বেড়া না থাকায় মাদক চোরাচালানের নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এটি। দু’ পাড়ের ঘনবসতির কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে এখানে।
সরেজমিনে জানা যায়, শুধু কুমিল্লা সীমান্তেই ছোট বড় দু’শতাধিক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে এ অবৈধ মাদক বাণিজ্য। আর প্রায় অর্ধশতাধিক স্পট দিয়ে স্রোতের মতো নেমে আসছে ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। এরপর এসব চালান যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। সীমান্তের অনেক যুবকই তাদের পেশা পরিবর্তন করে ফেনসিডিল ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। সিএনজি, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার, দুধের গাড়ি, কার্ভাডভ্যান এমনকি ট্রাকে করেও ফেনসিডিল পাচার করছে তারা। এ পাচার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নারী, শিশু ও স্কুল কলেজের ছাত্রীদের। দারিদ্রতার সুযোগে মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা বেঁধে পাচার করা হচ্ছে। শস্য বীজের প্যাকেট, কুমড়া, তরমুজ এর ভেতরে মাদক পরিবহনের পরে এবার কৌশল পাল্টেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তারা মুরগির খাবারের পাত্রের ভেতরে, আবার গাজার বালিশ তোষক বানিয়ে, এমনকি বাশের ভেতরে করেও ফেনসিডিল ইয়াবা আর গাজার চালান নিয়ে আসছে বাংলাদেশে।
সরকারি গাড়ির স্টিকার ব্যবহার করেও মাদক পরিবহনের কাজ করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তবে সীমান্তের কাছে বসবাসকারীরা কোন ভাবেই মুখ খুলতে চায় না মাদক চোরাচালানের বিষয়ে। সিএনজি চালক যুবক আহমদ (ছদ্ম নাম) বলে, দেখি অনেককেই মাদক নিয়ে চলা ফেরা করে মাল আনা নেয়া করে, কিন্তু আমরা গাড়ি চালাই তাই ওসবের খবর রাখি না। তবে, মাদকপাচারকারীরা খুব সুকৌশলে কাজটি করলেও মাঝে মধ্যেই মাদকের অনেক বড় বড় চালান ধরা পড়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত দেখুন ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিওতে: http://youtu.be/bUVnynSmx0E