মহাগ্রন্থ আল কোরআন। এটি অবতীর্ণ করা হয়েছে মুত্তাকিদের হেদায়েতের জন্য। সুরা বাকারার দ্বিতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ নিজেই ইরশাদ করেছেন, ‘এই সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকিদের জন্য হেদায়েত।’ প্রতিটি মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা দিয়ে দেওয়া হয়েছে এই বিস্ময়কর গ্রন্থে।
এটি এমন গ্রন্থ, যা বিজ্ঞানীর বিজ্ঞানচর্চা, শিল্পীর শিল্পচর্চা, চিকিৎসকের চিকিৎসাচর্চাসহ সব বিষয়ে দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। যেমন কেউ যদি পবিত্র কোরআন থেকে রাজকীয় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে ধারণা নিতে চান, তবে তিনি সুরা নামল তাফসির সহকারে পড়ে দেখতে পারেন।
কেউ যদি মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ নিয়ে গবেষণা করতে চান, তাহলে সুরা জারিয়াতের ৪৭ নং আয়াত দেখতে পারেন। সেখানে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, আমি নিজ ক্ষমতায় আকাশ সৃষ্টি করেছি এবং নিশ্চয়ই আমি একে সম্প্রসারিত করেছি।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৪৭)
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা শতাব্দীর বিশ দশক পর্যন্ত ধারণ করতেন যে মহাবিশ্ব স্থির রয়েছে। কিন্তু কোরআন ১৪ শ বছর আগেই বলে দিয়েছে যে মহাবিশ্ব ক্রমান্বয়ে সুষমভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে, অর্থাৎ গ্যালাক্সিগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অবশেষে আধুনিক বিজ্ঞান তা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে।
এভাবেই যারা যে বিষয়ের ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন নিয়ে গবেষণা করেছে, তারা সে বিষয়েই সফল হয়েছে।
এবার পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করেছে তুরস্কের কিরশেহির শহরের বাসিন্দারা। মসজিদটির নাম ‘হামিদিয়ে জামি’। এটি মধ্য আনাতোলিয়ার কিরশেহির শহরে অবস্থিত।
মসজিদটি প্রথম নির্মিত হয় ১৯১০ সালে। তখন ওসমানীয় সুলতান ও খলিফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদের নামানুসারে এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে মসজিদটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। পরে সম্পূর্ণ নতুনরূপে এখানে একটি নজিরবিহীন মসজিদ তৈরি করা হয়।
এখানে প্রবেশ করা মাত্র যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যায়। মসজিদটি সাজানো হয়েছে আকাশের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ সিলিং ও নরম ঘাসের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ কার্পেটে, যা বাস্তবে দেখলে মনে হবে আপনি অন্য কোনো জগতে চলে এসেছেন। প্রতিদিন এই মনোমুগ্ধকর মসজিদে নামাজ আদায় করতে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমায়। মসজিদে আগত অনেক মুসল্লি মন্তব্য করেন, এখানে এলে তাঁদের কাছে মনে হয়, তাঁরা যেন জান্নাতের বাগানে নামাজ আদায় করছেন।
দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সেফা ইকিনজি। তিনি তাঁর একটি সাক্ষাৎকারে মসজিদটির বিষয়ে বলেন, ‘প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা আমাকে জানিয়েছেন, তাঁরা পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ২২ নম্বর আয়াত থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মসজিদের নকশা নির্ধারণ করেছেন।’
আয়াতটি হলো, ‘যে পবিত্র সত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদস্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসেবে। অতএব, আল্লাহর সঙ্গে তোমরা অন্য কাউকে সমকক্ষ কোরো না। এসব তোমরা জানো।’
উল্লিখিত আয়াতের অনুকরণেই মসজিদটি নির্মাণের পর তার ছাদজুড়ে আকাশের ছবি অঙ্কন করা হয়েছে। আকাশ থেকে পানিবর্ষণের বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে মিহরাবের খাঁজে একটি ঝরনা আঁকা হয়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে আকাশ থেকে স্বচ্ছ পানি নেমে আসছে।
সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য প্রতিটি জানালার পাশে রাখা হয়েছে একটি সবুজ গাছ। আর নামাজ পড়ার জন্য মেঝেতে বিছানো হয়েছে সবুজ ঘাসের মতো নরম কার্পেট। মসজিদের অভ্যন্তরীণ নকশায় তাঁরা এভাবেই আয়াতটির মূল প্রেরণা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
মসজিদের এই ভিন্নধর্মী রূপ যে কাউকে আকৃষ্ট করে। সেখানে নামাজ আদায়কারী প্রত্যেক মুসল্লিই এক অন্য রকম প্রশান্তি অনুভব করেন।