ইরাকের আইসিসের উত্থাপন এবং আল কায়েদা প্রধানের ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে ইসলামি শাসনতন্ত্র কায়েম করার ঘোষণায় সক্রিয় হতে শুরু করেছে বাংলাদেশের তরুণ জঙ্গিরা। চেষ্টা করছে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার।
কিন্তু তাদের এ লক্ষ্যে পূরণে প্রধান বাধা সীমান্ত পারাপার। পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে যাওয়ার কথা তো চিন্তায়ই করা যায় না। অবৈধভাবে ভারতের প্রবেশও এখন প্রায় অসম্ভব। কারণ, আল কায়েদা নেতা আইমান আল জাওয়াহিরির ওই ঘোষণার পর ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে বাড়তি নিরাপত্তা নিয়েছে।
তাই সহজ একটা উপায়ের কথা চিন্তা করছে তারা। তাবলিগ জামাতের সঙ্গে বিদেশে দাওয়াতে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে তারা। এ লক্ষ্যে অনেকেই নতুন করে এই ধর্মপ্রচারক সংগঠনটি সঙ্গে ভিড়ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ দাবি করেছে, জাওয়াহিরির বক্তব্যে দেশের ছোট ছোট জঙ্গি সংগঠনগুলো অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রিগেড প্রশিক্ষণ নিতে সিরিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করে সশস্ত্র যুদ্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এদিকে জঙ্গিদের এসব তৎপরতা রুখে দিতে রাজধানীসহ সারাদেশেই অভিযান শুরু করেছে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম। যার অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার ভোরে রাজধানীর সেগুনবাগিচা ও রমনার ইস্কাটনে অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (পশ্চিম)। আর এ অভিযানে আটক হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই সদস্য। যারা কি না সিরিয়া থেকে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে সশস্ত্র জিহাদের ডাক দিতেন।
বার্তাবাংলা রিপোর্ট :: গোয়েন্দা পুলিশের গোপন এ অভিযানে দুই জন আটক হলেও পালিয়ে গেছে অন্যরা। আটকরা হলেন মো. আসিফ আদনান(২৬) এবং মো. ফজলে এলাহি তানজিল(২৪)। এর মধ্যে আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিকতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। আর ফজলে এলাহি তানজিল ‘এ’ লেভেল শেষ করেছেন রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসিফ ও তানজিল তাদের পলাতক অন্য সহযোগিদের নাম প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তাদের এক সহযোগী যুক্তরাজ্যে বসবাস করতেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশে আল কায়েদার নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করে জঙ্গি তৎপরতা ও সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে ইসলামি শরিয়া ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার মিশন নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তার নেতৃত্বেই সশস্ত্র জিহাদের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলেও স্বীকার করেন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ওই দুই সদস্য।
আসিফ ও তানজিলের দেয়া তথ্যমতে, তাবলিগ জামাতের বেশে খুব সহজেই যাওয়া যাবে সিরিয়াসহ যে কোনো মুসলিম দেশে। ঠিক এই সুযোগটি কাজে লাগাতেই এখন তাবলিগের সঙ্গে বিদেশ পাড়ি দেয়ার অপেক্ষা করছেন জঙ্গিরা।
এদিকে হঠাৎ দেশে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনের কারণে ব্যাখ্যা করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মনিরুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘আগে জঙ্গিরা হরকাতুল জিহাদ বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের হয়ে কাজ করলেও বর্তমানে তারা জাওয়াহিরির বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আইএসআই এর সাথে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশে আল কায়েদার জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরি করে নানা রকম নাশকতামূলক জঙ্গি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বর্তমান সরকারকে উৎখাত করা। কিন্তু বর্তমান সরকার জঙ্গি ইস্যুতে জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছে। তাই জঙ্গিদের কোনো চেষ্টাই সফল হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘ব্লগার রাজিব হত্যাকাণ্ডের সাথে আসিফ ও তানজিলের সম্পৃক্ততরা ছিল। কিন্তু এতো দিন প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার না করে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। এখন প্রমাণ হাতে এসেছে, তাই তাদের গ্রেপ্তার করা হলো।’