আমীর হোসেন »

৬০০ সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের জন্য পুনঃ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। যাঁরা ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অথবা বিএসসি ইন নার্সিং ডিগ্রি পাস এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল কর্তৃক রেজিস্টার্ড, তাঁরাই আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে (bsmmu.edu.bd) আবেদন করা যাবে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে প্রস্তুতি ও দরকারি তথ্য জানাচ্ছেন পাঠান সোহাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রেজিস্ট্রার ও সচিব ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান জানান, সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের এই বিজ্ঞপ্তি আগেও (জানুয়ারি মাসে) একবার প্রকাশিত হয়েছিল। তখন আবেদন করেছিলেন সাত হাজার ২১১ জন। তখন যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদের আবার আবেদন করতে হবে না। নতুন বিজ্ঞপ্তির আবেদনের সময় শেষ হলে খুব দ্রুত নিয়োগ পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার আসনবিন্যাস করা হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে।

নিয়োগ পরীক্ষা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. হান্নান জানান, এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আবেদনের সময় শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাকি কাজ সম্পন্ন হবে। পরীক্ষা আগের নিয়মে হতে পারে। ভাইভার জন্য প্রতি আসনের বিপরীতে তিনজন প্রার্থীকে রাখা হবে।

২০১৯ সালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত আফরিন আক্তার জানান, বিএসএমএমইউতে সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের এমসিকিউ পরীক্ষায় ১০০ নম্বর থাকে। এর মধ্যে ৭০ নম্বর নার্সিং টেকনিক্যাল বিষয়ে এবং বাকি ৩০ নম্বর বিভিন্ন বিষয়ের ওপর, যেমন—বাংলায় ১০, ইংরেজিতে ১০ এবং সাধারণ জ্ঞান ও দৈনন্দিন বিজ্ঞানে ১০ নম্বর থাকে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।

বিএসএমএমইউয়ের সিনিয়র স্টাফ নার্স মারজানা মুস্তাঈন জানান, দেশে চাকরিপ্রার্থী রেজিস্টার্ড নার্সের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। সে হিসাবে এবার আবেদন বেশি পড়তে পারে। তাই ভালোই প্রতিযোগিতা হবে বলা যায়! এ অবস্থায় ভালো পড়াশোনা-প্রস্তুতির বিকল্প নেই।

বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি নার্সিং সংশ্লিষ্ট টেকনিক্যাল বিষয়ে বেশি বেশি অনুশীলন করতে হবে।

প্রার্থীর সংখ্যা খুব বেশি হলে এমসিকিউ পরীক্ষার পরে লিখিত পরীক্ষা হতে পারে। তাই একই সঙ্গে এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি রাখাই ভালো। লিখিত পরীক্ষা ২০০ নম্বরের হবে। সময়সীমা চার ঘণ্টা। লিখিত/ব্যাবহারিকে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ৫০ নম্বরের ব্যাবহারিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

লিখিত পরীক্ষার নম্বর বণ্টন :
২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার মধ্যে বাংলায় ৪০, ইংরেজিতে ৪০, সাধারণ জ্ঞানে ৪০ এবং প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল বিষয়ের ৮০ নম্বর থাকবে।

বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি
বাংলা : নবম-দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র বই ভালো করে পড়তে হবে। ব্যাকরণ অংশ থেকে পরিভাষা, এককথায় প্রকাশ, বাগধারা, সন্ধি, কারক ও বিভক্তি, শব্দ, যুক্তবর্ণ প্রভৃতি থেকে প্রতিবছর কিছু প্রশ্ন আসে।

তাই অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এগুলো গুরুত্ব সহকারে পড়তে হবে।

কবি-সাহিত্যিক সম্পর্কেও প্রশ্ন আসে।

কবি-সাহিত্যিকদের জন্ম-মৃত্যু সাল, তাঁদের জীবনকাহিনি, কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস, নাটকের নাম জানা থাকতে হবে।

ইংরেজি : Right form of verb, Parts of speech, Translation suffix-prefix, Synonyms and Antonyms, Group verb, Appropriate word, Appropriate preposition, Idioms and Phrases ইত্যাদি থেকে সাধারণত বেশি প্রশ্ন আসে। এ ছাড়া গ্রামারের অন্যান্য বিষয়ও দেখতে হবে। পাশাপাশি মেডিক্যালে ব্যবহৃত শব্দগুলোর বানান জানা থাকতে হবে।

সাধারণ জ্ঞান : সাধারণ জ্ঞানের জন্য বিগত নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে অনুশীলন করতে পারলে খুব ভালো হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি, বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তর জানাশোনা থাকতে হবে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু, ভাষা আন্দোলন ও খেলাধুলা সম্পর্কেও ভালো পড়াশোনা করতে হবে।

প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল বিষয় : প্রার্থীদের বেসিক নার্সিং শিক্ষা সম্পর্কিত মৌলিক বিষয়গুলো ভালো জানা থাকতে হবে।

নার্সিং পেশায় প্রায়োগিক ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বেশি কাজে লাগে, সেসব বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে; যেমন—অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, কমিউনিটি অব নার্সিং, অ্যাডাল্ট নার্সিং, ফান্ডামেন্টাল নার্সিং, সাইকোলজি, মেন্টাল হেলথ, অর্থোপেডিক, মিডওয়াইফারি, ফার্মাকোলজি ইত্যাদি। ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস, পেডিয়াট্রিক অ্যান্ড নিউ বর্ন নার্সিং, ইন্টার্নশিপ অথবা পেশাগত ক্লিনিক্যাল ডিউটি সম্পর্কিত তথ্যও জানা থাকতে হবে।

টেকনিক্যাল বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিকস
সারকুলেটরি সিস্টেম, কার্ডিয়াক সিস্টেম, ডাইজেস্টিভ সিস্টেম, এন্ডোক্রাইন সিস্টেম, লিম্ফেটিক সিস্টেম, ইমিউন সিস্টেম, মাস্কুলার সিস্টেম, নার্ভাস সিস্টেম, রেনাল/ইউরিনারি সিস্টেম, রিপ্রডাক্টিভ সিস্টেম, রেস্পিরেটরি সিস্টেম, স্কেলেটাল সিস্টেম, অণুজীববিজ্ঞান ও ভ্যাক্সিন, নিউট্রিশন, রোগব্যাধি, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য।

এ বছর করোনা সম্পর্কিত প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা বেশি। গুরুত্বপূর্ণ টপিকসের ওপর স্বচ্ছ ধারণা থাকলে এমসিকিউ ও লিখিত—উভয় পরীক্ষায় ভালো করা যাবে।

যেভাবে সিনিয়র স্টাফ নার্স হয়েছি
সাব্বির মাহমুদ, সিনিয়র স্টাফ নার্স, বিএসএমএমইউ

♦ ২০১৭ সালে বিএসসি ইন নার্সিং পাস করার পর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নার্স হিসেবে যোগ দিই। পরে একটি বিদেশি এনজিওতে মেডিক্যাল টিমে নার্স হিসেবে কাজ করি। ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে চাকরি পাই।

♦ সিনিয়র স্টাফ নার্স পদের জন্য সিলেবাস অনুযায়ী নিয়মিত পড়াশোনা করেছি। কয়েকটি বিষয়ে দুর্বলতা থাকায় নার্সিং নিয়োগ প্রস্তুতির কোচিং ও গাইড বইয়ের সহায়তা নিয়েছি। টেকনিক্যাল বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি।

♦ বিএসএমএমইউতে আবেদন করার পর নিয়োগ পরীক্ষার জন্য দুই মাস সময় পেয়েছি। ওই সময় সিলেবাস অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক প্রায় সব টপিক পড়েছি। পরীক্ষায় বাংলা সাহিত্য ও ব্যাকরণ থেকে বেসিক কিছু প্রশ্ন এসেছিল। এ ছাড়া ইংরেজি গ্রামারের কমন বা গুরুত্বপূর্ণ টপিক থেকে কিছু প্রশ্ন এবং সাধারণ জ্ঞানে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয় থেকে প্রশ্ন এসেছিল। নিয়মিত অনুশীলন করায় লিখিত পরীক্ষায় ৯০-এর ওপরে মার্ক তুলতে সক্ষম হই।

♦ লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিই। লিখিত পরীক্ষার প্রায় দুই মাস পর মৌখিক পরীক্ষা হয়। মৌখিক পরীক্ষায় নিজের সম্পর্কে, নিজ জেলা, পড়াশোনা, নার্সিং প্রসিডিউর ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত প্রশ্ন করা হয়েছিল। আমার মৌখিক পরীক্ষা ছিল ১৫ মিনিটের মতো।

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »