মোহাম্মদ কামরুজ্জামান »

উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচলের প্রধান নৃগোষ্ঠী আপাতানি৷ বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনযাত্রা, নারীদের নাকের অলঙ্কার আর ট্যাটুর জন্য ভারতে তারা আলাদাভাবে পরিচিত৷ আজকের প্রতিবেদনে থাকছে জিরো উপত্যকার এই বাসিন্দাদের গল্প৷

এক স্বতন্ত্র সভ্যতা
অরুণাচল প্রদেশের জিরো উপত্যকার ছবি এটি৷ ৩৭ হাজারের বেশি আপাতানির বসবাস এখানে৷ তাদের রয়েছে নিজস্ব জীবনযাত্রা, ভূমি ব্যবস্থাপনা৷ বাস্তুসংস্থান আর প্রকৃতি রক্ষায় রয়েছে গভীর জ্ঞান৷

নাকের প্লাগ
ছবির এই নারীর নাম টাডু রেলুং৷ জিরো উপত্যকার সবচেয়ে প্রবীণ নারী তিনি৷ মুখে ট্যাটু আর নাকের ঐতিহ্যবাহী এই প্লাগের জন্য সারা বিশ্বই আলাদা করে চেনে তাদের৷ এই প্লাগটির নাম ইয়াপিং হুলো৷ এটি তৈরি হয় গাছের কাঠ থেকে৷ ১৯৭০ এর দশক থেকে নাকে এমন প্লাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে সরকার৷ বয়স্ক নারীদেরই এখনও ইয়াপিং হুলো পরতে দেখা যায়৷

নতুন আকর্ষণ
কেন এই প্লাগ পরতেন সেখানকার নারীরা? কারো মতে সৌন্দর্যের জন্য, কারো মতে প্রতিদ্বন্দ্বী উপজাতিদের হাত থেকে নিজেদের নারীদের রক্ষা করতে এর প্রচলন শুরু৷ কারণ যা-ই হোক, ধীরে ধীরে এই ঐতিহ্য থেকে সরে আসছেন আপাতানি নারীরা৷ সেখানকার নতুন আকর্ষণ এখন কিউই ফলের ওয়াইন৷

কিউই মদ
অরুণাচলের অধিবাসীরা কিউইর চাষ বলতে গেলে ছেড়েই দিয়েছিল৷ তবে পরিস্থিতি বদলে দিয়েছেন তাখে রিতা৷ কৃষি প্রকৌশলীর এই ছাত্রী ২০১৬ সালে নিজের গ্রামে মদের কারখানায় বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন৷ এক বছর পর তিনি নিজের বাগান আর রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা কিউই থেকে নতুন মদ তৈরি করেন৷

সহজ নয়
মদ তৈরির গাজন প্রক্রিয়াটি বেশ সময় সাপেক্ষ৷ যার জন্য সাত থেকে আট মাস অপেক্ষা করতে হয়৷ তবে শুধু অরুণাচল নয় এই মদ পাওয়া যায় পার্শ্ববর্তী আসাম আর মেঘালয় রাজ্যেও৷ ভারতের বাইরেও পানীয়টি রপ্তানির পরিকল্পনা চলছে৷ রিতা এরিমধ্যে স্থানীয় কৃষকদর কিউই উৎপাদনে ও চাষে সহযোগিতা করছেন৷ দিচ্ছেন ফলটি বিক্রির নিশ্চয়তাও৷

আয়ের নতুন খাত
টিলিং চাদা এবং টিলিং ইয়ানেং বহু বছর ধরে কিউই চাষের সঙ্গে জড়িত৷ কিন্তু কিউই মদ এখন তাদেরকে জীবনধারণের জন্য আয়ের নতুন উৎসের সন্ধান দিচ্ছে৷ তাদের মতে, কিউই উৎপাদন করা নিজের সন্তান লালনের মতো৷ তিন বছর ভালবাসা আর যত্নে বড় করতে হবে তাদের৷ তারপরই প্রথম ফলন মিলবে৷

রাসায়নিকমুক্ত চাষ
মদ উৎপাদনের কারণে জিরো উপত্যকার কিউই চাষীরা আবারো ফিরেছেন তাদের পুরনো পেশাতে৷ এখানকার উজ্জল সূর্যালোকে কোন ধরনের রাসায়নিক ছাড়াই ফলটি হয়৷ জিরো উপত্যকার পাহাড়ের ঢালে কিউই বাগানের দেখা মিলবে৷- ডিডাব্লিউ

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »