মোহাম্মদ কামরুজ্জামান »

করোনার সংক্রমণ চূড়ায়, তাই দু’সপ্তাহ করোনার সংক্রমণ স্থিতিশীল। ঈদে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আগস্টে বিপর্যয়ের শঙ্কা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দু’সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তিনি বলছেন, ধীরে ধীরে এখন সংক্রমণ কমতে থাকবে। তবে ভিন্নমত জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সংখ্যা কমানোর কারণেই পরিস্থিতি ভাল মনে হচ্ছে। আসলে সংক্রমণ কমেনি। তার ওপর কোরাবানির ঈদে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আগস্টে বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।

সংক্রমণের গতি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, প্রথম বিশ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে ঊনসত্তর দিনে। পরের বিশ হাজারে পৌঁঁছতে সময় লেগেছে তেরদিন। চল্লিশ থেকে ষাট হাজারে পৌঁঁছেছে মোটে পাঁচ দিনে। চতুর্থ বিশ হাজারে পৌঁছতে এক সপ্তাহ লাগলেও আশি থেকে লাখে সংক্রমণ ছড়িয়েছে ছয় দিনে। পরের বিশ হাজার রোগীও ছয় দিনে শনাক্ত। সপ্তম বিশ হাজার পাঁচ দিনে আর অষ্টম বিশ হাজারে পৌঁছেছে ছয় দিনে। এরইমধ্যে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌনে দুই লাখ ছাড়িয়েছে।

প্রথম পাঁচশ জনের প্রাণহানি হতে সময় লেগেছে ঊনআশি দিন। পাঁচশ থেকে এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে পনেরো দিনে। তৃতীয় পাঁচশ জনের প্রাণহানিতে সময় লেগেছে মোটে বারো দিন। দেড় হাজার থেকে দুহাজারে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে তেরো দিনে। এরইমধ্যে প্রাণ গেছে সাড়ে বাইশশোর বেশি মানুষের।

চতুর্থ মাস অর্থাৎ ছয়ই জুন থেকে পাঁচই জুলাই ছিল সবচেয়ে বিভীষিকাময়। এসময়ে মারা গেছেন বারোশ একচল্লিশ জন, যা মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি। সর্বশেষ দু’সপ্তাহের উপাত্ত অনুযায়ী, পরীক্ষার সংখ্যা কমে আসছে, সংক্রমণও কমতির দিকে।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর বলছেন, সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছে দু সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল রয়েছে পরিস্থিতি। তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহ যাবত একই রকম পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই সময় ২০ থেকে ২৩ শতাংশ হারে পজিটিভ আসছে। আমাদের যখন কমতে শুরু করবে এক বা দুই দিনে কমবে না। সহনীয় মাত্রায় পৌঁছতে পারে জুলাইয়ের শেষ নাগাদ।

তবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়ে দেয়ায় পরিস্থিতি ভাল দেখাচ্ছে কি-না সেই প্রশ্ন তুলে, উপাত্তের মান নিয়েও সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সংখ্যা আগের চেয়ে কমানো হয়েছে। এই কারণেই হয়ত আমরা সংক্রমণের হার কম দেখছি। যেটার ভিত্তিতে আমরা মনে করছি যে করোনার সংক্রমণ কমে যাচ্ছে তা সঠিক নাও হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, আমরা বলবো যে আমাদের প্রোডাকশন হার এখনো একের বেশি আছে। যেহেতু আমরা পরীক্ষা করছি কম, তাই সংক্রমণের সংখ্যাও কম দেখা যাচ্ছে। অফিসিয়ালি এই হার একের চেয়ে কম দেখালেও আসলে কম না।

তবে কোরবানি ঈদে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আগস্ট হতে পারে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ- এনিয়ে সবাই একমত।

ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, গত ঈদে আমরা যে ভুলগুলো করেছি স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারেনি। এবার তার আরোও বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। কোরবানির হাট এবং মাংস কাটাকাটির সময় স্বাস্থ্যবিধি মানাটা জরুরি তা না হলে দেখা যাবে সংক্রমণের হার আগের যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি হবে। দেশে করোনা মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেই আভাস দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »