জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপরই মারাত্মক প্রভাব দেখা দিচ্ছে। এতে করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়ার মৌসুমি ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বের যেসব দেশ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের কৃষির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন
সহজ বাংলায় বলতে গেলে বলতে হয়, জলবায়ু হচ্ছে কোনো এলাকা কিংবা ভৌগোলিক অঞ্চলের ৩০-৩৫ বছরের গড় আবহাওয়া। পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু যে হারে পরিবর্তন হচ্ছে তা স্বাভাবিক নয়। কিংবা পরিবর্তনের গতি কমিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। নানান কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। এর ফলে নানা ধরনের দুর্যোগ বাড়ছে। যেমন : বন্যা, খরা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি। এসব কারণে জানমালের ক্ষতি হচ্ছে অপূরণীয়।
কৃষির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে কৃষিখাতে। বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। তাই কৃষির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানো না গেলে এর মূল্য দিতে হবে বেশ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত শতাব্দীতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে ২৩ শতাংশ। এ ছাড়া নাইট্রাস অক্সাইড এবং মিথেনের পরিমাণ বেড়েছে যথাক্রমে ১৯ শতাংশ এবং ১০০ শতাংশ। এসব বিষয় কৃষির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
গবেষণা যা বলছে
বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, ২১০০ সন নাগাদ সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা একমিটার উঁচু হতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ ভূমি পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। আর এ তথ্য স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয়, তা কৃষির ওপর কী পরিমাণ প্রভাব ফেলবে।
তাই জলবায়ুর পরিবর্তনের এ বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন টেকসই কৃষিব্যবস্থার বিস্তার ঘটাতে হবে। বিভিন্ন ধরনের অভিযোজন কলাকৌশল আয়ত্ত করতে হবে, যাতে করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাংলাদেশের কৃষিখাতকে মুক্ত রাখা কিংবা নিদেনপক্ষে ঝুঁকি কমানো যায়।
বাংলাদেশের কৃষির ওপর উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব
বিজ্ঞানীরা বলছেন, অতিরিক্ত তাপ কিংবা আর্দ্রতা উভয়ই গাছের ছত্রাক রোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণের পাশাপাশি রোগের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। বোরোমৌসুমে রাতে ঠাণ্ডা ও কুয়াশা পড়লে ধানের পাতায় পানি জমে থাকে। এ ছাড়া যদি দিনে গরম পড়ে অর্থাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যায় তাহলে ব্লাইট রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়। অধিক আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার কারণে ব্লাইট রোগের মাত্রা বেড়ে যায়।
কৃষিতে অশনি সংকেত
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০৩০ সন নাগাদ বিশ্বে গড় তাপমাত্রা ১.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০৫০ সনে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি এবং ২১০০ সনে ২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। আর তা বলাই বাহুল্য যে এর প্রভাব বেশ মাত্রায় পড়বে বাংলাদেশের কৃষির উপরও। তাই এখনই সময় টেকসই কৃষিপ্রযুক্তির ওপর নজর দেওয়ার। তা না হলে বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। দেখা দেবে খাদ্য সংকট।
শেষকথা
উপসংহারে বলতে চাই, কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব একটি আসন্ন সংকট। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, দীর্ঘায়িত খরা এবং চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার ঘটনাগুলি খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তাই এটা অপরিহার্য যে আমাদের এখনই টেকসই চাষ পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
সেই সঙ্গে আমাদের কৃষিগবেষণা এবং প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। জলবায়ু-সহনশীল ফসলের জাত বেশি বেশি উদ্ভাবন করতে হবে। জলবায়ুর এই পরিবর্তনগুলিকে খাপ খাইয়ে নিতে এবং প্রশমিত করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এসব উদ্যোগ নিলেই কেবল আমরা আমাদের বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে কোটি কোটি মানুষের জীবিকা নিশ্চিত করতে পারবো।