রাজন মিত্র »

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্ব। এরপর বিদেশ থেকে উপহার পাঠানোর নামে পাতা হয় অভিনব প্রতারণার ফাঁদ। দেশি-বিদেশি এই প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিচ্ছেন অনেকেই।
এ রকম একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাদের শতাধিক ব্যাংক একাউন্টে মিলেছে কোটি কোটি টাকার লেনদেন। চক্রটির মূল হোতা নাইজেরিয়ার নাগরিক। তার সঙ্গে আছে বাংলাদেশিরাও।

এক নারীর সাথে ফোনে কথা হয় কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া কাজী সালাউদ্দিন তালুকদারের। জানানো হয় একটি পার্সেল আটকে আছে বিমানবন্দরে। যা এক সপ্তাহ আগে ফেসবুকে পরিচয় হওয়া বিদেশী বন্ধু পাঠিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্বের পর জানানো হয় পার্সেলে আছে সামান্য কিছু উপহার। কিন্তু কথিত কাস্টমস কর্মকর্তা একের পর এক দিতে থাকে চমক।

প্রথমে বলা হয় পার্সেলে স্বর্ণ আছে যা ছাড়াতে লাগবে ৬৫ হাজার টাকা। পরে বলা হয় স্কেনিং এ পার্সেলটিতে মিলেছে ১০ হাজার পাউন্ড। এরপর আবার বলা হয় ১০ হাজার নয় আছে ৬০ হাজার পাউন্ড।

সেই বন্ধুর পাঠানো বিদেশী মুদ্রা হাতে পেতে কথিত কাস্টমস কর্মকর্তার কথা মতো কয়েকে কিস্তিতে ৮ লাখ টাকা পরিশোধের পর হুশ ফিরে পান এই নারী। বুঝতে পারেন বিদেশী বন্ধু, তার পাঠানো উপহার আর শুল্ক কর্মকর্তা সবই ভূয়া।

অন্যদিকে, প্রতারণার ধরণ একই হলেও এই গল্পটি আরো অভিনব। শুল্ক কর্মকর্তা পরিচয়ে জানানো হয় তার ঠিকানায় আসা পার্সেলে আছে ৫০ হাজার পাউন্ড।

যার তথ্য এরই মধ্যে পেয়েছে জাতিসংঘের মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ বিভাগ। ফলে পার্সেলটি ছাড়াতে লাগবে জাতিসংঘের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বিভাগ, ইন্টারপোল ও যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ছাড়পত্র।

এসব সনদ যোগার করে দেয়ার কথা বলে উপহার আর বিদেশী মুদ্রা পাবার আশায় ভুক্তভোগী কয়েকধাপে পরিশোধ করেন প্রায় ৫৫ লাখ টাকা।

এরকম বেশকটি অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে গোয়েন্দারা। ডিবির ক্যান্টমমেন্ট জোনাল টিম সন্ধান পায় নাইজেরিয়ান একটি চক্রের। যারা বাংলাদেশি একটি চক্রের সাথে মিলে এসব প্রতারণা করে আসছে। ধরা পড়ে এক নাইজেরিয়ানসহ বেশকয়েকজন বাংলাদেশি প্রতারক।

চক্রের মূল হোতা মাইকেল নাইজেরিয়ায় বসে নিয়ন্ত্রণ করে চক্রটি। নিজেকে আমেরিকান কিংবা ইউরোপিয়ান পরিচয় দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্ব করে। পরে উপহার পাঠানোর কথা বলে বন্ধুকে ফাঁদে ফেলে।

এই কাজে তাকে সহায়তা করে বাংলাদেশের দায়িত্বে থাকা বাচ্চু ও তার স্ত্রী। তাদের একটি দল ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা আদায় করে তুলে দেয় বাংলাদেশে থাকা নাইজেরিয়ান হেনরি জনের কাছে।

বাচ্চু দম্পতির দলটির সদস্যদের বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে গত কয়েকমাসে কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। এই চক্রে আর কেউ আছে কিনা তা তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, কেউ রিস্কা চালায়, কেউ ভবঘুরে, কেউ গার্মেন্টস কর্মী প্রতিসপ্তাহে তাদের ব্যাংকে ট্রানজেকশন হয় ৫ লাখ টাকা। সেই রিপোর্টগুলো ব্যাংকের মানুষ কেন দিতে পারে না সেটা তারই ভালো বলতে পারবে। ব্যাংকের এই সমস্ত লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত।

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »