আমীর হোসেন »

জাতীয় সংসদে ভিডিও প্রজেক্শনে ২০২০-২১ সালের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনার সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রীর পরিবর্তে তৃতীয় কোনো ‘ব্যক্তির’ কণ্ঠে বাজেট উপস্থাপন নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন।

বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি, তৃতীয় কোনো ব্যক্তি টেলিভিশনের পর্দায় বাজেটটি বর্ণনা করেছেন, মাননীয় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে। এমন কি এ-ও দেখা গেছে অন্যের দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় অর্থমন্ত্রী এক পর্যায়ে নিজেই টেবিল চাপড়াচ্ছেন। তাহলে একজন দর্শকের মনে প্রশ্ন জাগে এই বাজেট কী মাননীয় অর্থমন্ত্রী নিজে উপস্থাপনা করেছে না অন্য কেউ।’

২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট ’৮০ দশকের স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সময়ে দেউলিয়া বাজেটগুলোর কথাই মনে করিয়ে দেয় বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপির এই নেতা। প্রস্তাবিত বাজেটের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মঈন খান বলেন, ‘পুরো বাজেটের এক তৃতীয়াংশই হলো ঘাটতি যা জিডিপির ৬ শতাংশ। যেখানে বিগত প্রায় ৩০ বছর ধরে প্রত্যেকটি সরকার এই প্রচেষ্টাই করেছে- বাজেট যতদূর সম্ভব স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বনির্ভর করা যায়। কেবলমাত্র দেশি-বিদেশি ঋণনির্ভর হয়ে বাজেটে শুঙ্করের ফাঁকি দিয়ে এই দুঃসময়ে দরিদ্র মানুষের জীবন ও জীবিকার সমাধান আগামী বাজেটে হবে-এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।’

বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘এই সংকটকালে সরকার একটি বাজেট দিয়েছে যে বাজেট থেকে দেশের ১৭ কোটি মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক। আমরা লক্ষ্য করলাম যে, অনেক বড় বড় প্রতিশ্রুতি এই বাজেটে থাকার পরেও এটা যেন একটা কথার ফুলঝুড়ি।’

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগের বিরোধিতা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক শিক্ষক বলেন, ‘বছরের পর বছর নামমাত্র কর দিয়ে অবৈধ সম্পদকে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনীতির কী উত্তরণ হয়েছে তা এখনো পর্যন্ত কারও কাছে বোধগম্য নয়। এখন সময় এসেছে এই ধরনের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে এই বিপদের সময়ে দেশের করোনা আক্রান্ত মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় বিনিয়োগ করা।’

করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের রাজস্ব আদায় নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাজেটের বিরাট ঘাটতি কিভাবে পুরণ হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব বাজেটে নেই। আমরা বর্তমান বছরে দেখছি সরকারের রাজস্ব আয় ৩০ জুন নাগাদ প্রায় অর্ধেকে নেমে যেতে পারে এবং আসছে বছরে করোনা পরিস্থিতির যে দীর্ঘমেয়াদী ফলশ্রুতি তাতে করে আগামী বছরেও রাজস্ব আদায় পরিস্থিতির এমন কোনো উন্নয়ন সাধিত হওয়ার লক্ষণ নেই।’

আবদুল মঈন খান বলেন, ‘এই অবস্থায় বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বাজেটের মূল লক্ষ্য যেটা হওয়া উচিত ছিল তা হলো- এক) রাজস্ব ব্যয় সচেতনভাবে কমিয়ে আনা এবং সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সম্পুর্ণ বন্ধ করে দেওয়া এবং দুই) ২ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটকে (এডিপি) সরাসরি অর্ধেকে নামিয়ে নিয়ে আসা। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে আনলে কর্মসংস্থান ও জীবিকার সমস্যা হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এই যুক্তি ধোপে টিকে না।’

এর ব্যাখ্যা দিয়ে মঈন খান আরও বলেন, ‘এডিপির ভেতরেও যেসব ব্যয়ের তালিকা দেওয়া হয়েছে তা সবই বিপুলভাবে বর্ধিত হারে। আমরা অতীতে দেখেছি যে একটি বালিশের মূল্য ৬ হাজার টাকা, একটি পর্দার মূল্য ৮৪ হাজার টাকা। আইএমইডি’র মাধ্যমে যৌক্তিকীকরণ করলে উন্নয়ন বাজেট থেকে যে এক লক্ষ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত হয়ে আসবে সেটা দিয়ে আমরা আগামী বাজেটে খুব সহজে কোভিড-১৯ ক্ষতিগ্রস্ত কোটি কোটি কর্মহীন নারী-পুরুষ, প্রান্তিক কৃষক, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী এবং দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সমস্যার সমাধান খুব সহজে করা সম্ভব।’

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »