বার্তাবাংলা ডেস্ক »

ডেল্টা লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদিবা রহমানের নেতৃত্বে কোম্পানিটির গ্রাহক ও কর্মকর্তাদের প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে এবং অবৈধভাবে বিদেশে অর্থ পাচার করা হচ্ছে-বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে এমন একটি অভিযোগ করা হয়েছে।

সম্প্রতি এম এ হক নামের একজন এ অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের অনুলিপি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান বরাবরও পাঠানো হয়েছে। এতে ডেল্টা লাইফে সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। তবে অভিযোগকারীর বিস্তারিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়নি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আদিবা রহমানের নেতৃত্বে দুর্নীতিবাজ প্রশাসন বিভিন্ন ছলচাতুরীর মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের সাধারণ ও নিরীহ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ বীমা গ্রাহকদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করছে। এর মাধ্যমে নিজেরা (আবিদা রহমানের নেতৃত্বে দুর্নীতিবাজ প্রশাসন) কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হচ্ছেন এবং অবৈধভাবে আয় করা অর্থ বিদেশে পাচার করছেন। মালিক পক্ষ ইতোমধ্যে তাদের বিনিয়োগ করা পূজি অবৈধ পন্থায় সরিয়ে নিয়েছে।

প্রিমিয়ামের বিপরীতে কমিশন দেয়ার বিষয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বীমা পলিসির ক্ষেত্রে বীমা কর্মীদের বর্তমানে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের কমিশন দেয়া হয় ২২ শতাংশ, যা আগে আইডিআরএ’র নির্দেশিত নীতিমালা অনুযায়ী দেয়া হতো ৩৫ শতাংশ। একইভাবে আগে পরবর্তী বছরে কমিশন দেয়া হতো ১২ শতাংশ, যা এখন দেয়া হচ্ছে ১০ শতাংশ। নবায়নের ক্ষেত্রে আগে প্রিমিয়াম আয়ের ৮ শতাংশ কমিশন দেয়া হতো। কিন্তু এখন তা কমিয়ে ৫ শতাংশ দেয়া হচ্ছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট (মাঠ সহকারী) যদি কোনো মাসে প্রিমিয়াম বাবদ কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ টাকা জমা দিতে না পারে, তাহলে ওই মাসে তাকে পুরাতন পলিসিগুলোর নির্ধারিত কমিশন দেয়া হয় না। অফিস স্টাফদের প্রতিমাসে বেতন বাবদ ৫-৬ হাজার টাকা দেয়া হয়। কিন্তু দেখানো হয় ২০-২৫ হাজার টাকা।

বীমা গ্রাহকদের হয়রানির বিষয়ে অভিযোগে বলা হয়েছে, বীমা গ্রাহকদের দাবির টাকা যেখানে সর্বোচ্চ ৩ মাসের মধ্যে পরিশোধের কথা, সেখানে বছরের পর বছর গ্রাহকদের ঘুরানোসহ নানা হয়রানি করা হয়। মৃত্যু দাবির ক্ষেত্রে ছলচাতুরীর মাধ্যমে সাধারণ ও নিরীহ বীমা গ্রাহকদের দাবির টাকা দেয়া হয় না। তবে যারা ক্ষমতাশালী, তারা দাবির টাকা আদায় করে নিতে পারেন।

আদিবা রহমান ডেল্টা লাইফে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেয়ার পর থেকে গ্রাহক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এভাবে বঞ্চিত ও হয়রানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়েছে, কেউ প্রশাসনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কথা বললে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক চাকরি খেয়ে ফেলে।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে আদিবা রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আইডিআরএ’র নিয়ম অনুযায়ী আমরা প্রিমিয়াম আয়ের ওপর কমিশন দিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয় না। আমাদের বিরুদ্ধে বাকি যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তাও ভিত্তিহীন। এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।’

এদিকে অভিযোগ পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা ডেল্টা লাইফের একটি প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, কাঙ্খিত প্রথম জমা প্রিমিয়াম অর্জিত না হওয়ায় প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বীমা এজেন্ট নির্ধারিত প্রথম জমা প্রিমিয়াম আয় করতে পারলে শুধুমাত্র তাকেই নিম্নের ছক (প্রজ্ঞাপনের ছক) অনুযায়ী নবায়ন কমিশন দেয়া হবে। ছকে মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা প্রথম জমা প্রিমিয়াম আয় করতে পারলে নবায়ন কমিশনের শতভাগ দেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আদিবা রহমানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএ-এর সদস্য গোকুল চাঁদ দাস বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমি এখনও পাইনি। আর অভিযোগ কেন বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে করা হয়েছে তা বুঝতে পারছি না। এটা তো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয় না। তারপরও অভিযোগ আমরা পেলে তা ক্ষতিয়ে দেখব।’

তিনি বলেন, প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম এবং নবায়ন প্রিমিয়ামের ওপর এজেন্টরা কী হারে কমিশন পাবে তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে ঠিক করে দেয়া হয়েছে। কেউ সেই হারের বেশি বা কম দিলে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ পেলেও তা আমরা ক্ষতিয়ে দেখব।

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »