বার্তাবাংলা ডেস্ক »

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই’২০১৮-এপ্রিল’২০১৯) সঞ্চয়পত্র থেকে নেট বিনিয়োগ এসেছে ৪৩ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। যা পুরো অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬৬ শতাংশ বেশি। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ হাল নাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক আমানতের সুদের চেয়ে দ্বিগুণ মুনাফা মিলছে সঞ্চয়পত্রে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতা, ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রবণতা ও বিনিয়োগে চলছে মন্দাভাব। সবমিলিয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসাবে সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন সাধারণ মানুষ।

জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১২ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। এর মধ্যে জুলাই-এপ্রিল সময়ে ঋণ এসেছে ৪৩ হাজার ৪৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১৬৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ২৪১ কোটি টাকা।

এদিকে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়। এছাড়া নজরদারিও বাড়ানো হয়। তবে বিভিন্ন শর্ত অরোপ করার পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেনি।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, একক মাস হিসেবে এপ্রিলে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে নেট (প্রকৃত) বিনিয়োগ আসে ৩ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। যা গত বছরের এপ্রিলে ছিল ৩ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা দেয় সরকার। মেয়াদপুর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত দেয়া হয়। প্রতিমাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে নেট ঋণ হিসাব করা হয়। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নেট বিনিয়োগকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’হিসেবে গণ্য করা হয়।

এদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়তে থাকায় সরকারের সুদ ব্যয়ের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করতে কেনার সময় বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে সরকার। সর্বশেষ প্রস্তাবিত বাজেটে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে গত মার্চ থেকে সঞ্চয়পত্রের সব ধরনের লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা বাধ্যতামূলক করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এরপরও ব্যাংকের চেয়ে সুদহার বেশি পাওয়ায় সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন গ্রাহকরা।

সবশেষ ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল।

বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মে এর পর থেকে এই হার কার্যকর আছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »