নওগাঁর স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ‘একুশে পরিষদ’ এর ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নওগাঁর ছোট যমুনা নদীতে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
নওগাঁ শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদী। শহরের খলিশাকুড়ি খেয়াঘাট থেকে লিটন ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। নৌকাবাইচ দেখতে নদীর দু’কূলে বিভিন্ন বয়সী হাজারও নারী-পুরুষ ও শিশুদের সমাগম ঘটে। নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে নদী তীরে বসে গ্রামীণ মেলা। দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজনে খুশি শহরবাসী ও আগত বিনোদনপ্রেমীরা।
প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ছয়টি দল অংশ নেয়। এতে প্রথম হয়েছে নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগারী গ্রামের আলেফ মোল্লার নৌকা, দ্বিতীয় শৈলগাছী গ্রামের মহসিন আলীর নৌকা এবং তৃতীয় হয়েছে মাখনা গ্রামের মোজাম্মেল হকের নৌকা।
নৌকাবাইচ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নওগাঁ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন। একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজিবি-১৬ লে. কর্নেল খাদিমুল বাশার, পরিষদের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য ওহিদুর রহমান, সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, ডাক্তার ময়নুল হক, বিন আলী পিন্টু, রফিকুদ্দৌলা রাব্বি, মনোয়ার হোসেন লিটন, নাইচ পারভিন, বিষ্ণ কুমার দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক এম এম রাসেল, জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কায়েস উদ্দিনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এম এম রাসেল বলেন, ‘আমরা গত ২৫ বছর থেকে বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজ করছি। সংগঠনটির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নৌকাবাইচ, পানিতে ডুব প্রদর্শনী, আর্ট ক্যাম্প, লাঠিখেলা, আলকাপের গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ব্রতচারী নৃত্যসহ নানা আয়োজন।’
পরিষদের সভাপতি অ্যাড. আব্দুল বারী বলেন, ‘একসময় জেলার দিঘলীয় ও গুটার বিলে নৌকাবাইচ খেলা হতো। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বিল ও নদীগুলো এখন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পানিও তেমন নেই। ফলে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। আমরা নৌকাবাইচের মাধ্যমে প্রাচীন ও বাঙালির এ খেলাকে সামনে নিয়ে আসতে কাজ করছি।’
নওগাঁ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘গ্রাম বাংলার অনেক পুরনো একটি সংস্কৃতি হলো নৌকাবাইচ। বিনোদনের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে নৌকাবাইচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ আয়োজনগুলো আমাদের উজ্জীবিত করে। এমন সুন্দর একটি আয়োজনের জন্য একুশে পরিষদের সাথে সম্পৃক্তদের ধন্যবাদ জানাই।’