বার্তাবাংলা ডেস্ক »

ক্যামেরায় নিজের চেহারার বিকৃতি দেখে সহ্য করতে পারবেন না বলে পাসপোর্ট সাইজের ছবি তোলা ছাড়াই অনেক বছর কাটিয়ে দিয়েছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস আইভি। সেই জান্নাতুলই চলচ্চিত্র বানালেন, নিজে অভিনয়ও করলেন। চলচ্চিত্রের নাম দিলেন নিরবে (সাইলেন্টলি)।

২০ বছরের পোড়া ক্ষতের জীবন জান্নাতুলের। ১৯৯৭ সালের কথা। তখন তিনি সবে স্নাতক (সম্মান) শেষ করেছেন। একদিন রান্না করতে গিয়ে ওড়নায় আগুন লেগে যায়। চিকিৎসকদের ভাষায় পোড়ার পরিমাণ ছিল ৬০ শতাংশ। মুখ, শরীরের ওপরের অংশ পুড়ে কুঁচকে বিকৃত হয়ে যায়। তারপরও বেঁচে যান জান্নাতুল। গলা লেগে গিয়েছিল ঘাড়ের সঙ্গে। এ পর্যন্ত চামড়া প্রতিস্থাপনসহ অস্ত্রোপচার লেগেছে প্রায় ৫০টি।

 

পরিবার ও বন্ধুদের সহায়তায় অনিয়মিত (প্রাইভেট) শিক্ষার্থী হিসেবে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করেন। এলএলবি পাস করেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে মাস্টার্স করেন। চলচ্চিত্রবিষয়ক বিভিন্ন শর্ট কোর্স করেন। তবে জান্নাতুলের ভাষায় ভালো চলচ্চিত্র বুঝতে এবং ভালো দর্শক হওয়ার জন্যই ছিল তাঁর এ পড়াশোনা।

জান্নাতুল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষা আন্দোলনের একজন কর্মী। বর্তমানে এনজিও ভয়েস অ্যান্ড ভিউজের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জান্নাতুলের কথায়, ২০১২ সালে নিরবে নির্মাণ করেন তিনি। এতে প্রতিবন্ধী নারীদের কেউ অভিনয় করতে রাজি হলেন না। তাই নিজেই অভিনয় করলেন তিনি। তবে এ চলচ্চিত্র তৈরির আগে তিনি চারজন প্রতিবন্ধী নারীর জীবন নিয়ে উত্তরণ নামের একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেন। সেন্সর বোর্ড থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত নিরবে তৈরিতে খরচ হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ টাকা। পুরো টাকাটাই তাঁর নিজের। স্টোরি, স্ক্রিপ্ট, পরিচালনা সবই তাঁর।

চলচ্চিত্রটি নিয়ে জান্নাতুলের মন্তব্য, এ চলচ্চিত্রের হাসিনাদের মতো হাসিনারা নীরবে কাজ করেন। তবে নীরবে হলেও হাসিনারাই তাঁদের কাজের মধ্য দিয়ে অন্য একটি ভবিষ্যৎ সাহসী প্রজন্ম তৈরি করছেন।

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »