ভারতের চণ্ডীগড়ে ধর্ষণের শিকার ১০ বছরের শিশুটি কন্যাসন্তানের মা হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে শারীরিক দিক ও ঝুঁকি বিবেচনা করে শিশুটির গর্ভপাত করাতে পরিবারের আবেদন গত মাসে নাকচ করে দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার ভারতের ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ সকালেই শিশুটি চণ্ডীগড়ের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (জিএমসিএইচ) কন্যাসন্তানের জন্ম দেয়। গত শুক্রবার সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুটি ও তার সদ্য প্রসব করা কন্যাশিশুটির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
জিএমসিএইচের চিকিৎসকেরা বলেন, ‘সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটির ওজন ২ দশমিক ২ কেজি; যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। নবজাতকটিকে এনআইসিইউ ও তার মাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
বিবিসি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুটিকে তার মামা একাধিকবার ধর্ষণ করে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুটির বাবা সরকারি কর্মচারী, মা গৃহকর্মী। একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হলেও শিশুটি ভয়ে এ ঘটনা কাউকে জানায়নি। দুই সপ্তাহ আগে পেটের তীব্র ব্যথা নিয়ে মা-বাবা তাকে চণ্ডীগড় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই চিকিৎসকেরা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বলেন, শিশুটি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার শরীর সন্তান ধারণের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। এ কারণে শিশুটিকে বাঁচাতে চিকিৎসকদের পরামর্শে গর্ভপাত করানোর জন্য আদালতে আবেদন করেন শিশুটির মা-বাবা। কিন্তু আদালত ওই আবেদন নাকচ করে দেন। পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁরা। গত ২৮ জুলাই শিশুটির গর্ভপাত করাতে পরিবারের আবেদন চিকিৎসকদের পরামর্শে নাকচ করে দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে শিশুটির প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভারতে আইন অনুযায়ী, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ২০ সপ্তাহ পর গর্ভপাত নিষিদ্ধ। নারী-পুরুষের আনুপাতিক বৈষম্য কমাতে এই কঠোর আইন করা হয়েছে। ভারতে দীর্ঘদিনের গেড়ে বসা প্রথা অনুযায়ী, দেশটিতে ছেলেসন্তানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এ কারণে মেয়েশিশুর ভ্রূণ হত্যার ঘটনা ঘটে। ২০ সপ্তাহ পর ভ্রূণের লিঙ্গ জানার পর এসব হত্যার ঘটনা ঘটে বলে ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এ বিষয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি পিটিশন দাখিল করা হয়। এই পিটিশন দাখিল করা ব্যক্তিদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা কয়েকজন নারী রয়েছেন, যাঁরা ২০ সপ্তাহ পর গর্ভপাত করাতে চান। এ বিষয়টি আদালত সব সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়ে থাক।