বার্তবাংলা রিপোর্ট :: যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে শাহবাগ চত্বরে সমাবেশ চলবে— সন্ধ্যায় মহাসমাবেশে থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড না হওয়া পর্যন্ত টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়া হবে। এ সময় নিজ নিজ এলাকায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
মহাসমাবেশে শপথ বাক্যেপাঠ করা হয়। আর এ শপথ বাক্যের প্রতিটি শব্দে ফুঁসছে শাহবাগ। একাত্তরের রক্ত উত্তাল করা স্লোগান। আবার জেগে উঠেছে তারুণ্য। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির রায় না নিয়ে ঘরে না ফেরার অঙ্গীকার আন্দোলনকারীদের।
শাহবাগের উত্তাল জনসমুদ্র বিচারের নামে আপোস চায় না। একাত্তরের অর্জনকে দলীয় রাজনীতির বলি হতে দেবে না বলে জানান তারা।
এদিকে, কাদের মোল্লাসহ একাত্তরের যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসি, জামাত নেতাদের নাগরিকত্ব বাতিল, জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ তাদের সকল আর্থিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এসেছে শাহবাগের ছাত্র-যুব-জনতার মহাসমাবেশ থেকে। মহাসমাবেশ থেকে যার যার জায়গা থেকে জামাত-শিবিরকে প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দেয়া হয়। জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে কাদের মোল্লাসহ রাজাকারদের সদস্যপদ বাতিল করারও দাবি করেন তারা। জামাতের দেশ অচল করে দেয়ার হুমকিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা উল্লেখ করে কঠোর শাস্তির দাবি করে উত্তাল জনতা। পাশাপাশি জামাতের সব গণমাধ্যম বর্জন করারও আহ্বান জানানো হয় ছাত্র-যুব-জনতার এ মহাসমাবেশ থেকে।
সকল যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব বাতিল করা না পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সোচ্চার আহ্বান জানান আন্দোলনকারীরা।
জামাতের সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে। জামাত- শিবির দেশে যে সকল অপরাধ করেছে তার ভিডিও চিত্র দেখে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
এ সমাবেশে যোগ দিতে সকাল থেকেই জনতার ঢল নেমে। চলছে স্লোগান আর গণসঙ্গীত। ক্লান্তিহীন এ আন্দোলনে মিলেছেন সব বয়সের, সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। অরাজনৈতিক এ সমাবেশে সমবেত ছাত্র-জনতার পাশাপাশি বক্তব্য রাখছেন মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি, একইসঙ্গে আইন করে ধর্মভিত্তিক ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো উত্তাল শাহবাগ চত্বর। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই বেড়ে চলে মানুষের ভিড়। গগণবিদারী স্লোগানে প্রকম্পিত চারপাশ।
মানবতাবিরোধী আপরাধের সন্দেহাতীত প্রমাণের পরও কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ সবার।
আন্দোলনে শরিক হওয়া এক নারী জানান, ‘এতো খারাপ একটা লোকের ফাঁসি না হয়ে যাবজ্জীবন হওয়াটা খুব খুব কম শাস্তি। তাই আমরা সবাই একসাথে হয়ে এখানে আন্দোলন করতে এসেছি।’
আরেক নারী বলেন, ‘একটাই প্রশ্ন, বিচারক আর কী প্রমাণ চান, আর কী হলে তারা আইনে আসবে, এটাই আমার প্রশ্ন।’
বিরতি ছাড়াই চলছে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি। আবৃত্তি, গণসঙ্গীত, নাটকে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছে আগত জনতা।
আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। কিশোর থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সের মানুষই এই দাবিতে একাত্ম। কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারে অটল হাজারো মানুষ। রায় নিয়েই ঘরে ফিরবেন তারা।
এক আন্দোলনকারী জানান, ‘কাদেরের ফাঁসি চাই। চাই, চাই, চাই ফাঁসি চাই। না হলে এখান থেকে আমরা যাবো না, রাজপথ ছাড়ব না।’