বার্তাবাংলা রিপোর্ট :: এতোদিন শীতে জীর্ণ হয়ে থাকা প্রকৃৃতি যেন আড়মোড়া ভেঙে নতুনভাবে জেগে উঠতে শুরু করেছে। প্রকৃতির সাজসাজ রব সর্বত্র জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা। বসন্তের ছোঁয়ায় প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মাতাল হাওয়ার স্পর্শ টের পাওয়া যাচ্ছে মানুষ, পাখি বা প্রাণীকূলে। প্রকৃত অর্থে বসন্তের আগমন নিয়ে আসে আবেগঘন, বর্ণিল আনন্দ বার্তা।
কোকিল না ডাকলে বা শিমুল-পলাশের দেখা না পেলে না কি বসন্ত আসতো না। এখন নাগরিক ব্যস্ততার কারণে দিনপঞ্জির পাতা দেখেই সদর্পে বাসন্তী শাড়িতে তরুণীরা বেরিয়ে পড়েন উৎসবে। তারাই যেন আমাদের নগরজীবনের বসন্ত-দূত। আর এই বসন্ত-দূতদের দেখা পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে, চারুকলার বকুলতলা আর বইমেলা তো বটেই। তবে আজকাল ব্যস্ত অফিসে, রাস্তায়ও দেখা মিলছে বাসন্তী পোশাকে বসন্ত বরণ করে নিতে বেরোনো তরুণীদের। পয়লা ফাল্গুনে বসন্ত বরণ করে নেয়ার রীতি পালন করছেন সবাই। যারা বসন্তের গন্ধ দিব্যি ভুলে আছেন, তারা কিন্তু বাসন্তী শাড়িতে বসন্ত-দূত দেখেই বুঝে ফেলবেন ‘মধুর বসন্ত এসেছেৃ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী দীপ্তি, ফাহরিয়া, যুক্তা, নুসরাত মিলে এখন থেকেই পরিকল্পনা করছেন বসন্তে তারা কী পরবেন। শাড়ি না কি ফতুয়া? ক্লাস করবেন না কি বকুলতলায় গান শুনবেন? যা-ই করুন আর না করুন, বইমেলায় তো একবেলা যেতেই হবে এ রকম নানা পরিকল্পনা সাজাতে ব্যস্ত তারা। অন্যদিকে নাবিলা, অনন্যা এই দুই বন্ধুর মন ভীষণ খারাপ। গত বছর পড়াশোনা শেষ করে নাবিলা কাজ করছেন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে আর অনন্যা ব্যাংকার। এবারের পয়লা ফাল্গুনে অনন্যার ব্যাংক বন্ধ থাকলেও নাবিলাকে অফিসে যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্ছল জীবনের কথা ভেবে মন খারাপ হয় ঠিকই, তবে বসন্ত যেন তার ছোঁয়া লাগিয়ে যায় সবকিছুতেই। তাই তো অফিস করলেও নাবিলার পরনে থাকবে বাসন্তি শাড়ি। আর অফিস শেষে দুই বন্ধু মিলে হলুদ শাড়ি আর কাচের চুড়ি পরে সোজা ছুটবেন ক্যাম্পাস অভিমুখে। শাড়ি কাপড়ের দোকানে যেন বসন্তের রং লেগেছে। বাংলার ছয় ঋতুর ছয় রঙ। তবে কোনো কোনো ঋতুতে বাঙালি মেতে ওঠে সর্বজনীন রঙে। তেমনই এক ঋতু বসন্ত। আর তাই এখন “োর বিক্রি হচ্ছে বাসন্তি, গেরুয়া, লাল রঙের শাড়ি। একটা পাড়ভাঙা তাঁতের শাড়ির সঙ্গে কাচের চুড়ি আর খোঁপাভর্তি গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলই যেন চিরায়ত বসন্তের সাজ।
কেউ কেউ এই দিনে কপালে আঁকেন মঙ্গলফোঁটা। অফিস করবেন যারা, তারা কিন্তু মোটেই ভাববেন না আমাদের আর বসন্ত কী? নতুন শাড়ি না কিনলেও একটা হলুদ, লাল বা সবুজ জাতীয় শাড়ি বেছে নিয়ে পরে ফেলুন না। সঙ্গে একটা বিপরীত রঙা চুন্দ্রি বাটিক বা লেইস বসানো ব্লাউজ হলে মন্দ হয় না। অফিসে একটা কেজো ভাব রাখতে চাইলে আর কিছু নয়, একটা ছোট্ট টিপ পরে ফেলুন। ব্যস, অফিসের গাম্ভীর্যও নষ্ট হবে না আবার কাজের মধ্যেই নিমন্ত্রণ জানাতে পারবেন ঋতুরাজকে।
সৈয়দা ফারজানা রুম্পা কাজ করেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। বসন্তের প্রথম দিনটিতেই অফিসের কাজে যেতে হবে ঢাকার বাইরে। কিন্তু তাই বলে কি বসন্ত বরণ হবে না? অবশ্যই হবে। রুম্পা একটি ফতুয়া কিনেছেন বাসন্তি রঙের। তাতে হাতের কাজ এবং চুমকি বসানো রয়েছে। শাহনিলা বলেন, এই পোশাকটি পরেই বেরিয়ে পড়বো অফিসের কাজে। অফিসে পরার জন্য এটি উপযোগী পোশাক, সেই সঙ্গে ফ্যাশনেবল এবং বসন্তকে বরণ করার পোশাক। যারা শাড়ি পরে অভ্যস্ত নন তারা কিন্তু নির্দ্বিধায় পরতে ফেলতে পারেন সালোয়ার-কামিজ অথবা ফতুয়া। বাটিক কিংবা হাতের কাজের লোকজ মোটিফে নকশা করা ফতুয়া বেশ মানানসই হবে। ফতুয়া পরলে সঙ্গে একটা মালা পরে নিন পুঁতির। দেখবেন অফিসের কাজের মধ্যে কোনো ধরনের জাঁকজমক ছাড়াই আপনার সাজে এসে যাবে উৎসবের ভাব। আর কিছু না হলেও একটা একরঙা কামিজের সঙ্গেই চলতে পারে নানা রঙে টাইডাই করা ওড়না। এবারের বসন্তে অফিস আছে বলে বসে বসে কেবল অফিসই করতে হবে তা নয়, যে যেখানে যে কাজেই থাকি না কেন, অন্তত পোশাকে এবং সাজে তো প্রকাশ করতে পারি। ষড়ঋতুর এই দেশে প্রকৃতির এমন সাজসজ্জা আর কোনো সময়ই যেন সেভাবে চোখ পড়ে না। বসন্তের বন্দনায় কবিরা মেতে উঠেছেন বারবার। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়ে লেখেন গানৃ আহা আজি এ বসন্তে/এতো ফুল ফোটে, এতো বাঁশি বাজে/এতো পাখি গায়…