বার্তাবাংলা ডেস্ক ::যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে জামায়াতে ইসলামীর ডাকে টানা দ্বিতীয় দিনের হরতাল শুরু হয়েছে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ।
আগের দিন হরতালে চট্টগ্রামে সংঘাতে চার জনের প্রাণহানী এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ভাংচুর ও বিক্ষিপ্ত বোমাবাজির পর মঙ্গলবার রাত থেকেই রাজধানীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে রাজধানীর প্রতিটি সড়কে রয়েছেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য।
বুধবার সকালে রাজধানীতে আগের দিনের তুলনায় বেশি যানবাহন চলতে দেখা যায়। বিভিন্ন সড়কে প্রচুর রিকশা ও অটোরিকশা চলে।
সকালে গাবতলী, মহাখালী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে না গেলেও সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন গন্তেব্যে কয়েকটি বাস ছেড়ে গেছে বলে পরিবহন শ্রমিকরা জানান। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মিরপুরের শ্যাওড়াপাড়া এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির কর্মীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় দুই জনকে আটক করা হয় বলে কাফরুল থানার ওসি আবদুল লতিফ জানান।
কাছাকাছি সময়ে মিরপুর-১ ও বাঙলা কলেজ এলাকাতেও পুলিশের সঙ্গে শিবিরি কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। বাঙলা কলেজ এলাকায় হরতালকারীরা কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। মিরপুর-১ এলাকায় পুলিশের একটি গাড়িতেও হামলার চেষ্টা হয়।
সকাল ৭টার দিকে যাত্রাবাড়ীর রায়ের বাগ এলাকায় শিবির কর্মীরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় দুইজনকে আটক করা হয় বলে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই এমরানুল ইসলাম জানান।
পৌনে ৭টার দিকে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় শিবির কর্মীরা। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। পুলিশ চারজনকে আটক করার কথা জানিয়েছে।
এদিকে আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা প্রত্যাখ্যান করে এই জামায়াত নেতার ফাঁসির দাবিতে মঙ্গলবার বিকাল থেকেই রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে কয়েক হাজার তরুণ। বুধবার সকালেও এই জমায়েতে যোগ দিতে এসেছেন অনেকে।
শাহবাগ মোড়ের চার দিকে চারটি সিগন্যাল পোস্ট যুদ্ধাপরাধীদের চারটি কুশপুত্তলিকা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। মাঝখানে রয়েছে কাদের মোল্লার কুশপুত্তলিকা। এছাড়া সাপের আকৃতিতে বানানো হয়েছে জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযমের একটি কুশপুত্তলিক।এরই মাঝে চলছে প্রতিবাদী গান, কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি।
মঙ্গলবার হরতালের সময় ব্যাপক সহিংসতা ঘটে চট্টগ্রাম ও সিলেটে। চট্টগ্রামে দিনভর গাড়ি ভাংচুর এবং দফায় দফায় সংঘর্ষে নিহত হন চারজন।আর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ভাংচুর, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং হাতবোমা বিস্ফোরণে রণক্ষেত্রে পরিণত হয সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের মামলার রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার পর বুধবারও হরতাল ডাকে দলটি।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে বলেন, ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যে রায় ঘোষণা করেছে তা ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং সরকার নির্দেশিত’।
“এ রায় প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি সরকারের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও বিচারের নামে অবিচারের প্রতিবাদে আমাদের ঘোষিত গণতান্ত্রিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল বুধবারও সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি পালিত হবে।”
‘আন্দোলনের মাধ্যমে’ আব্দুল কাদের মোল্লাসহ জামায়াতের সব শীর্ষ নেতাকে মুক্ত করে আনা হবে বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
একাত্তরে খুন, ধর্ষণ লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম রায়ে গত ২১ জানুয়ারি জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
একই ধরনের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযম, বর্তমান আমীর মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ সাত নেতা ও বিএনপির দুই জনের বিচার চলছে ট্রাইব্যুনালে।
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী শুরু থেকেই এই বিচারের বিরোধিতা করে এলেও গত কিছুদিন ধরে দলটির নেতাকর্মীরা সারা দেশে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাংচুরসহ বিভিন্নভাবে সহিংসতায় জড়াচ্ছে।
এ কারণে সরকারের শরিক দলগুলোসহ বিভিন্ন মহল থেকে জামায়াতে ইসলামীর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের জোরালো দাবি এসেছে। এ দাবিতে হরতালও করেছে সিপিবি, বাসদসহ কয়েকটি বাম দল।
আর ট্রাইব্যুনাল বাতিল ও শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে এর আগে দুই দফা হরতাল করে জামায়াতে ইসলামী। সর্বশেষ ৩১ জানুয়ারির হরতালে তাদের প্রধান শরিক বিএনপিও সমর্থন দেয়।