ইয়াসমিন লিপি »

করোনার কবল থেকে বাঁচতে মাস্ক পরার বিকল্প। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও বাইরে বের হলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু কোনটা পরবেন? কাপড়ের মাস্ক নাকি সার্জিক্যাল মাস্ক থেকে এন-৯৫। কোন মাস্ক কতটা নিরাপদ? কতবারই বা ব্যবহার করা যাবে একটি মাস্ক? এ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এক ঝলকে জেনে নিন সেসব পরামর্শ।

১. ভাল্‌ভ-যুক্ত এন-৯৫ মাস্কে ভাল্‌ভের ফিল্টার বাইরে থেকে ভাইরাস ভিতরে প্রবেশ আটকে দেয়। এতে মাস্ক পরিহিতের সুবিধা হলেও তা অন্যদের বিপাকে ফেলতে পারে। কারণ, ভাল্‌ভ-যুক্ত এন-৯৫ মাস্ক পরা ব্যক্তিরা করোনাভাইরাসের বাহক হলে, তার নিঃশ্বাসের মধ্যে দিয়ে তা বেরিয়ে অন্যদের সংক্রমিত করতে পারে।

২. ভাল্‌ভ নেই, এমন এন-৯৫ মাস্ক পরা যেতেই পারে। এই ধরনের মাস্ক করোনাভাইরাসের পাশাপাশি বায়ুবাহিত ধুলিকণা ও সূক্ষ্ম জলকণা থেকে সুরক্ষা দেয়। ভাল্‌ভ নেই এমন এন-৯৫ মাস্কের ভাইরাস প্রতিরোধের কার্যকারিতা তাই অনেক বেশি, প্রায় ৯৫ শতাংশ।
৩. ভাল্‌ভহীন এন-৯৫ মাস্ক ছাড়াও এফএফপি (ফিল্টারিং ফেস পিস)-২, এফএফপি-১ এবং এফএফপি-৩ মাস্কও তুলনামূলকভাবে বেশ সুরক্ষিত। এফএফপি-২ মাস্কের কার্যকারিতা প্রায় ৯৪ শতাংশ। অন্যদিকে, প্রায় ৮০ শতাংশ ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে এফএফপি-১ মাস্ক। তবে এফএফপি-৩ মাস্কের কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৯৯ শতাংশ।

৪. এন-৯৫ বা এফএফপি জাতীয় মাস্ক ঠিক কত বার ব্যবহার করা যাবে? বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, পানিতে ধোয়া হলে এ ধরনের মাস্কের কার্যকারিতা হ্রাস পেয়ে যায় এবং পাঁচবারের বেশি তা কখনই ব্যবহার করা উচিত নয়।

৫. এন-৯৫ বা এফএফপি জাতীয় মাস্ক তুলনামূলকভাবে দামি হওয়ায়, তার বদলে অনেকেই সার্জিক্যাল মাস্ক পরেন। সার্জিক্যাল মাস্কের কার্যকারিতা ৯৫ শতাংশের বেশি হলেও তা একবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয় বলে চিকিৎসকদের অভিমত। এই ধরনের মাস্ক বড় জলকণা বা দেহ বর্জিত বিপজ্জনক তরলের ছিটা থেকে সুরক্ষা দেয়। সুরক্ষা দেয় করোনাভাইরাসের হাত থেকেও।

৬. এন-৯৫ বা এফএফপি অথবা সার্জিক্যাল মাস্ক ছাড়াও কাপড়ের বিভিন্ন ধরনের মাস্ক আছে বাজারে। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কাপড়ের মাস্কে কতটা সুরক্ষিত থাকা যায়, তা শতাংশের হিসাবে বলা সম্ভব নয়। তবে একেবারে কোনও মাস্কের সুরক্ষা না থাকার থেকে বরং কাপড়ের মাস্ক পরা ভাল।

৭. তবে মাস্কের বদলে গামছা, রুমাল বা ওড়না দিয়ে নাক-মুখ ঢাকা একেবারেই সুরক্ষিত নয়। কাপড়ের মাস্ক বায়ুবাহিত ধুলিকণা এবং সূক্ষ্ম জলকণা থেকে আংশিক সুরক্ষা প্রদান করে।

৮. কাপড়ের মাস্ক একবারের বেশি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে প্রতিবার ব্যবহারের পর তা গরম পানিতে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে এবং কাপড়ের মাস্ক ছিঁড়ে গেলে তা ব্যবহার করা উচিত নয়।

৯. যেকোনও ধরনের মাস্ক পরার আগে সাবান বা অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হাতে মাস্ক পরতে হবে।

১০. মাস্ক পরলেও অনেকেই তা নিয়ে সতর্ক নন। ভুলে যাবেন না, মুখ-নাক রক্ষা করার জন্যই মাস্ক পরেছেন। তাই তা দিয়ে যেন সব সময় নাক-মুখ ঢাকা থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেই মাস্ক পরে তা নাক বা থুতনির নীচে ঝুলিয়ে রাখেন। এটা করা একেবারেই উচিত নয়।

১১. বারবার মাস্কে হাত দেওয়া একেবারেই উচিৎ নয়। সেই সঙ্গে মনে রাখবেন, মাস্কের সামনের অংশ স্পর্শ করা যাবে না। নিতান্তই যদি মাস্কের সামনে হাত দেয়ার প্রয়োজন হয়, তবে আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিন। মাস্ক স্পর্শ করার পর আবার হাত পরিষ্কার করুন।

১২. নোংরা বা ভেজা মাস্ক যাতে কোনওভাবেই ব্যবহার করতে না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সেই সঙ্গে অন্যের ব্যবহৃত মাস্কে হাত দেবেন না। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »