মোহাম্মদ কামরুজ্জামান »

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জামের উপকার থাকলেও, জামের বীজও কিন্তু কোনও অংশে কম নয়। জাম একটি মিরটাসেই প্রজাতির চিরহরিৎ ট্রপিক্যাল গাছ, যার উৎস বাংলাদেশ, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়া।

বিশেষ করে হজমের সমস্যা সমাধানে জামের বীজ বিকল্প রোগ উপশমকারী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় যেমন আয়ুর্বেদ, ইউনানী ও চাইনিজ ওষুধ ইত্যাদিতে। এছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জামের বীজ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। কেন জামের বীজ ডায়াবেটিসে এত উপকারী? ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জামের বীজের ব্যবহার কিভাবে করবেন? আমরা জানাচ্ছি।

ম্যাক্রোবায়োটিক পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শিল্পা অরোরা জানাচ্ছেন,”ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জামের বীজ খুবই উপকারী। ফল ও বীজ উভয়েই উপস্থিত জাম্বোলাইন ও জাম্বোসাইন নামক পদার্থ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। জামের বীজও রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। জাম খাওয়া উপকারী। বীজগুলো শুকিয়ে গুঁড়ো করে প্রত্যেকদিন খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।”

এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল বায়োমেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী জামের বীজ হাইপারগ্লাইসেমিক ইঁদুরের শরীরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে ও ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে খুবই উপকারী। আরও জানা যায়, জামের বীজের উপকারী প্রোফাইল্যাকটিক ক্ষমতা হাইপারগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফলে রোগীদের রোজের খাদ্যতালিকায় জামের বীজ রাখা দরকার।

আয়ুর্বেদ অনুসারে জামের বীজের গুণাগুণ জেনে নিনঃ

নীরোগ স্ট্রিটের আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ রাম এন কুমারের মতে,”জামের বীজ অধিকাংশ আয়ুর্বেদিক ডায়াবেটিসের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয়। জামের সংস্কৃত নাম জাম্বু, এবং বিভিন্ন আদি আয়ুর্বেদশাস্ত্রে এর উল্লেখ আছে। ভারতের আর এক নাম জাম্বুদ্বীপ বা অনেক জাম্বু (জাম) বা ভারতীয় ব্ল্যাকবেরি গাছের দেশ। আয়ুর্বেদ মতে জাম হল অ্যাসট্রিনজেন্ট অ্যান্টি-ডিউরেটিক, যা ঘন ঘন মূত্রত্যাগ কমাতে সাহায্য করে, হাইপোগ্লাইসেমিক গুণ আছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ যা ডায়াবেটিসে উপকারী। জাম ফল ও বীজ উভয়েই এই গুণগুলি উপস্থিত।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিভাবে জামের বীজ ব্যবহার করবেন দেখে নিন:
-জাম পরিষ্কার করে একটি পাত্রে রাখুন।

-আঙুল দিয়ে ফল থেকে বীজ ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য একটি শিশিতে রেখে দিন।

-বীজগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন যাতে গায়ে শাঁস না লেগে থাকে।

-পরিষ্কার কাপড়ে বীজগুলো ছড়িয়ে রোদ্রে 3-4 দিন শুকোতে দিন।

-শুকিয়ে গেলে বাইরের খোসা ছাড়িয়ে ভিতরের সবুজ অংশ বার করুন।

-সবুজ অংশটি সহজেই আঙুলের চাপে ভাঙতে পারবেন। সবগুলি ভেঙে আরও কিছুদিন রোদ্রে শুকোতে দিন।

-এবার শুকনো বীজগুলো মিক্সিতে ভালো করে গুঁড়ো করে নিন।

-ভাল করে গুঁড়ো করার পর চালুনিতে চেলে নিন।

-তারপর জামের বীজের গুঁড়ো একটি বায়ু-নিরোধক শিশিতে রেখে দিন এবং প্রয়োজন মতো ব্যবহার করুন।

-এক গ্লাস জলে এক চা-চামচ জামের বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে পান করুন।

-এই পদ্ধতি অবলম্বন করার আগে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন।

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »