রাজন মিত্র »

করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড ১৯-এ বিপর্যস্ত পুরো পৃথিবী। সবাই অনেক বেশি চিন্তিত কোভিড ১৯ নিয়ে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না আমাদের শারীরিক সুস্বাস্থ্য নিয়ে। বিশেষ করে যারা উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্থুলতা, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য ক্রনিক রোগে ভুগছেন তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান নিয়ে আলোচনা করছি। মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান ফ্যাটি এসিড। আজ এই ফ্যাটি এসিড নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরছি।

মস্তিষ্কের শতকরা ৬০ ভাগই ফ্যাটি বস্তু। ফ্যাটি এসিড প্রধানত দুই প্রকার—অ্যাসেনসিয়াল ফ্যাটি এসিড ও নন-অ্যাসেনসিয়াল ফ্যাটি এসিড ।

অ্যাসেনসিয়াল ফ্যাটি এসিড হলো সেই সমস্ত ফ্যাটি এসিড যা আমাদের শরীর তৈরি করতে পারে না এবং আমরা খাবারের মাধ্যমে তা পেয়ে থাকি। নন-এসেনসিয়াল ফ্যাটি এসিড বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীর প্রস্তুত করে থাকে।

ফ্যাটি এসিডগুলোর মধ্যে আমাদের শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড। এবার জানা যাক ওমেগা -৩ আমাদের কেন প্রয়োজন।

রক্তে চর্বি জাতীয় উপাদানের আধিক্যে

ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড লিভারে এল ডি এল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড এর সংশ্লেষণে বাধা প্রদান করে প্লাজমাতে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং উপকারি এইচ ডি এল বাড়াতে সাহায্য করে। এর ফলে রক্তনালীতে চর্বি জমাটবদ্ধ হয়ে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায়

১. রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে

২. রক্তে চর্বির মাত্রা সমন্বয় করে

৩. রক্তনালীতে অণুচক্রিকার জমাট প্রক্রিয়াকে হ্রাস করে

৪. অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ঝুঁকি হ্রাস করে

৫. রক্তনালীর পুনঃসংকোচন করে মৃত্যুহার হ্রাস করে।

ফ্যাটি লিভারে

নন – অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ নিরাময়ে ওমেগা-৩ লিভারের অতিরিক্ত চর্বি হ্রাসের মাধ্যমে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসে সাহায্য করে।

ফুসফুসের দীর্ঘ মেয়াদী রোগে

ফুসফুসের দীর্ঘ মেয়াদী প্রতিরোধজনিত রোগের (COPD) চিকিৎসায় ওমেগা ৩ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চোখের রোগে

চোখের শুষ্কতাজনিত লক্ষণসমূহের উন্নতি ঘটায় এবং বার্ধক্যজনিত দৃষ্টিশক্তি লোপ প্রতিরোধে ওমেগা ৩ শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে।

বাতজনিত ব্যাথায়

Rheumatoid Arthritis বা বাতজনিত ব্যাথায় এবং ব্যাথায় অত্যন্ত কার্যকরী ওমেগা ৩।

গর্ভাবস্থায়

গর্ভকালীন পর্দা ফেটে যাওয়া, নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে প্রসব ব্যাথা রোধে ওমেগা ৩ গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়াও গর্ভকালীন বিষন্নতা রোধে সহায়তা করে ওমেগা ৩। এ ছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে ওমেগা ৩ গ্রহণে স্নায়ুতন্ত্রের একটি প্রধান উপাদান গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে অত্যন্ত জরুরি।

এবার দেখা যাক ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় এমন খাবারের মধ্যে কি কি আছে?

বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, হ্যালিবাট, টুনা, সারডিন্যাস, ম্যাকেরেল, হেরিং), ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ডিম ও বিভিন্ন প্রকার শাক সবজি। ইলিশ, রুপচাঁদা ও পাঙ্গাশ মাছে খুব অল্প পরিমাণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়ার প্রমাণ মেলে। ওমেগা-৬ সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে আছে তিল, তিশি, বাদাম, মিষ্টিকুমরা, দুগ্ধজাত পণ্য, শস্য জাতীয় খাদ্য, সূর্য্যমুখীর তেল প্রভৃতি। এছাড়াও বাজারে ওমেগা ৩ এর বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট ওষধ পাওয়া যায় তাও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা যেতে পারে।

আসল কথা হলো যাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ ক্রনিক রোগ রয়েছে তাদের জন্য ওমেগা ৩ নিত্যদিন গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

লেখক : ডা. এস এম সহিদুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান।

ই-মেইল : [email protected]

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »