করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার কয়েকটি লক্ষণের মধ্যে অন্যতম ঘ্রাণশক্তি চলে যাওয়া। অর্থাৎ করোনায় আক্রান্তরা কোনো কিছুর ঘ্রাণ বুঝতে পারেন না। চীনের উহান, ইরান পরে ইতালি থেকে প্রথম করোনা ভাইরাস সংক্রমণের যেসব রিপোর্ট পাওয়া যায়, তাতে বলা হয়, করোনায় আক্রান্তদের এটা একটা সাধারণ বৈশিষ্ট। ঘ্রাণশক্তি হারানোর সবচেয়ে বড় কারণ হলো ভাইরাল ইনফেকশন, যেমন ঠা-া লাগা, সাইনাস বা শ্বাসযন্ত্রের যেকোনো সংক্রমণে এমনটা হতে পারে।
কোভিড-১৯, সার্স এবং মার্সের মতো এসব ভাইরাস ঠান্ডাজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে এবং ঘ্রাণশক্তি নষ্ট করে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব লক্ষণ শেষ বা পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর আবার ঘ্রাণশক্তি ফিরে আসে। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নাসারন্ধ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য ঘ্রাণশক্তি কমে যায়। এই নাসারন্ধ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নাকের ভিতর ঘ্রাণ নেয়ার জন্য যে অ্যারোমা মলিকিউল আছে তাকে নাকে রিসেপটরে পৌঁছাতে দেয়া না।
এর ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়ার ঘটনা কয়েক মাস বা কয়েক বছরও স্থায়ী হতে পারে।
কিন্তু নোভেল করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়ার ধরন আলাদা। কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অনেকে আকস্মিকভাবে ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
তারা এক বা দুই সপ্তাহ পরে আবার স্বাভাবিক ঘ্রাণশক্তি ফেরত পেয়েছেন। এসব মানুষের অনেকেই বলেছেন, তাদের নাকের ভিতর কোনো প্রতিবন্ধকতা বা নাক বন্ধ হয়ে থাকে নি। তাদের নাকের ভিতর ছিল পরিষ্কার। অন্যদের ক্ষেত্রে ঘ্রাণশক্তি হারানোর সময় দীর্ঘায়িত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, কয়েক সপ্তাহ পরেও তারা পুরোপুরি ঘ্রাণশক্তি ফিরে পান নি।
আকস্মিকভাবে এই ঘ্রাণ ফেরত আসা থেকে বোঝা যায় নাকের ভিতর ঘ্রাণ নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছিল, যার কারণে অ্যারোমা মলিকিউল বা অ্যারোমা অণুগুলো নাকের ঘ্রাণগ্রহীতার কাছে পৌঁছাতে পারে নি। এমন অবস্থায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের নাকের সিটি স্ক্যান করে দেখা গেছে, নাকের ভিতর ফোলা ফোলা কোমল টিস্যু এবং মিউকাস প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে ঘ্রাণ সংক্রান্ত স্নায়ু বা খাঁজগুলোতে। একে বলা হয় ক্লেফট সিনড্রোম। এ ছাড়া নাকের বাকি অংশ এবং সাইনাসের বিষয়টি স্বাভাবিক। ফলে তাদের নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে বা ছাড়তে কোনো সমস্যা হয় না।