একটু গা গরম হলেই এখন টেনশন। সঙ্গে কাশি ও গলাব্যথা থাকলে তো কথাই নেই। করোনাভাইরাস আতঙ্কে মানুষ ভুলেই গেছেন সাধারন ইনফ্লুয়েঞ্জার কথা। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে যে নিয়ম করে আসে প্রতি বছর। এ বছরও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি এবং তা বাড়ছেও ক্রমাগত। সাধারণ ফ্লুয়ের সঙ্গে এ বছর যোগ হয়েছে বাড়তি ভয়। কিন্তু সত্যিই কি এত ভয় পাওয়ার কিছু আছে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সব্যসাচী সেন বলেন, ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে হালকা থেকে মাঝারি জ্বরের সঙ্গে গা ম্যাজম্যাজ, একটু সর্দি ভাব, কখনো নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধের মতো উপসর্গ থাকে। কাশিও হতে পারে, তবে তা এমন যাতে মনে হয় কফ তোলার জন্য কাশছে, কিন্তু কফ উঠছে না। এ অবস্থায় খুব একটা চিন্তার কিছু নেই। ঘরে বিশ্রামে থাকুন। গরম পানির ভাপ নিন। হালকা খাবার ও পর্যাপ্ত তরল খাবার খান। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল খান। মাল্টিভিটামিনও খেতে পারেন।’
সব্যসাচী সেন আরও বলেন, ‘মাস্ক পরে বাড়ির অন্যদের থেকে দূরে থাকুন। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে পরিবারের অন্য কারও সূত্রে করোনা ঘরে এলে সবার প্রথমে তা রোগীর শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইনফ্লুয়েঞ্জার জ্বর ও কষ্ট মোটামুটি দুই-তিন দিন থাকে। তার পর কমে যায় বা কমতে শুরু করে। কিন্তু যদি তা না হয়, চার-পাঁচ দিন পরও জ্বর থাকে ও জ্বর বাড়তে শুরু করে, রোগী দুর্বল হয়ে পড়েন কিংবা ডায়রিয়া, সর্দি কমে গিয়ে শ্বাসকষ্ট বা কাশির মাত্রা বাড়তে থাকে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কোভিডের পরীক্ষা করা উচিত।
কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন?
*খুব বেশি জ্বর হবে এমন কোনো কথা নেই। হালকা গা গরম থেকেও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ভাইরাল ফ্লু।
*জ্বরের সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা, দুর্বল লাগা, স্বাদে অরুচি এগুলো অসুখের অন্যতম লক্ষণ।
*জ্বরের সঙ্গে গা-হাত-পায়ে ব্যথা অনুভব বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থাকে।
*অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে নাক দিয়ে কাঁচা জল ঝরা, সর্দি-কাশি দেখা দিতে পারে।
তাহলে কি জ্বর হলেই পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো? কারণ পরে যদি ধরা পড়ে যে কোভিড-১৯ ছিল, ততদিনে তো অনেক মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে যাবে?
চিকিৎসকদের মতে, সেটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে এমনিতেই শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তার ওপর গা ঘেঁষাঘেঁষি করে লাইনে দাঁড়িয়ে টেস্ট করালে সেখান থেকেই রোগ এসে যেতে পারে। সংক্রমণের প্রথম অবস্থায় রিপোর্টেরও আবার ফলস পজিটিভ, ফলস নেগেটিভ আছে।
তাই একবার পরীক্ষা হলেই তা নিয়ে নিশ্চয়তার কিছু নেই। জ্বর এক দিন দু’দিন থাকলেই তা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া এমনিতেও কো-মর্বিডিটি না থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এত হালকাভাবে থাকে যে প্যারাসিটামল খেলে ও একটু বিশ্রামে থাকলেই ঠিক হয়ে যায়। কাজেই জ্বর এলেও প্রতিটি সিদ্ধান্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো নিন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌতিক পান্ডা বলেন, ‘পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে সাবধান না হলে এমনিও সবার হবে। কাজেই সতর্ক থাকুন। বাড়িতে কারও জ্বরজারি হলে, সে ইনফ্লুয়েঞ্জা হোক কী কোভিড-১৯, তাকে সবার থেকে আলাদা করে দিন। রোগী ও পরিবারের সবাই ত্রিস্তরীয় মাস্ক পরুন। বারবার হাত ধুতে থাকুন। ইনফ্লুয়েঞ্জাও যথেষ্ট ছোঁয়াচে। আর একটা কথা, যেকোনো একটি সংক্রমণ কিন্তু অন্য সংক্রমণকে ডেকে আনতে পারে। কাজেই সাবধানতার কোনো বিকল্প নেই।’
সুতরাং জ্বর হলেই টেনশন করবেন না। তাতে শরীর আরও দুর্বল হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দু-তিন দিনে সমস্যা কমে যাবে। কাজেই সাবধানে থাকুন। উপসর্গের গতি-প্রকৃতির দিকে নজর রাখুন। ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো চলুন। সূত্র : আনন্দবাজার