আমীর হোসেন »

Dating App

মেরুদণ্ডের সমস্যায় ঘাড়ে যেসব লক্ষণ দেখা দেয় তা হলো-দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় ঘাড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া; ঘাড় থেকে উৎপন্ন ব্যথা হাতে ছড়িয়ে পড়া; প্রাথমিক পর্যায়ে কাঁধ ও হাতব্যথা; হাতের বিভিন্ন অংশে ঝিন-ঝিন, শিন শিন করা; হাতের বোধশক্তি কমে আসা এবং ক্রমে হাতের অসারতা; ধীরে ধীরে হাত দুর্বল হয়ে হাতের কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া; চূড়ান্ত পর্যায়ে পঙ্গুত্ববরণ করা।
ঘাড় ও কোমর ব্যথা নিয়ে নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন দেশের প্রখ্যাত বাত-ব্যথা-প্যারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি

বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আলী

প্রশ্ন : মানুষ তার জীবদ্দশায় কোনো না কোনো সময়ে কোমর বা ঘাড় ব্যথায় আক্রান্ত হয়েছেন, এই ব্যথা কতটা মারাত্মক?

উত্তর : বেশির ভাগ ঘাড় ও কোমর ব্যথা খুব সাধারণ কারণে হয়। কিন্তু এই সাধারণ ব্যথাই মানুষকে ভীষণ বিপদে ফেলে দেয়- অনেকে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন বা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই ঘাড় ও কোমর ব্যথা অবহেলার বিষয় নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই ব্যথা নির্মূল করতে না পারলে রোগীকে অনেক ভুগতে হতে পারে এমনকি অপারেশনের টেবিলে পর্যন্ত যেতে হতে পারে।

প্রশ্ন : প্রথমে কোমর ব্যথার কথা বলুন, কোমর ব্যথা কেন হয়?

উত্তর : কোমরের গঠনতন্ত্র থেকে দেখা যায় মেরুদণ্ডের পাঁচটি হাড় নিয়ে কোমর গঠিত। প্রতি দুটি হাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে থাকে তালের শাঁসের মতো ডিস্ক। স্পাইনাল কর্ড বা মেরুরজ্জু থেকে যে স্নায়ু বের হয় তা হাড় ও ডিস্ক সমন্বয়ে গঠিত ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে কোমর নিতম্ব ও পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই হাড় ও ডিস্ক ছাড়াও কোমরে অনেক মাংসপেশি ও লিগামেন্ট রয়েছে। তাই এগুলোর কোনো একটিতে অসামঞ্জস্য তৈরি হলেই কোমর ব্যথা হয়।

প্রশ্ন : কোমর ব্যথার কারণ হিসেবে অনেকে বলেন, হাড় বেড়ে গেছে বা ক্ষয় হয়ে গেছে অথবা অনেকে বলেন হাড় ফাঁকা হয়ে গেছে। আসল ব্যাপারটি কি?

উত্তর : কোমর ব্যথার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস ও পিএলআইডি। কোমরের হাড়ের ক্ষয় হলে তাকে লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস বলে। এই ব্যাপারটিকে বোঝাতে বিভিন্নজন ক্ষয় হওয়া, বেড়ে যাওয়া বা ফাঁকা হয়ে যাওয়া বলে থাকেন। তিনটি ব্যাপারই এক।

প্রশ্ন : আপনি পিএলআইডির কথা বললেন, এটি কি?

উত্তর : প্রল্যাপস লাম্বার ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্কের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো পিএলআইডি। কোমরের দুটি হাড়ের মধ্যবর্তী ডিস্কটি সরে গিয়ে স্নায়ুর গোড়া বা মেরুরজ্জুতে চাপ সৃষ্টি করলে তাকে পিএলআইডি বলে।

প্রশ্ন : আমাদের দেশে সায়াটিকা শব্দটি খুব প্রচলিত, সায়াটিকা কী?

উত্তর : সায়াটিকা হলো কোমর ব্যথার স¤প্রসারিত রূপ। ব্যথা কোমর থেকে উরু, হাঁটু অথবা পায়ে চলে গেলে তাকে সায়াটিকা বলে। অনেক রোগী পা ঝিঁ ঝিঁ ধরা, পা চিবানোর কথাও বলে থাকেন। পিএলআইডি ও লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস থেকেই সায়াটিকা হয়ে থাকে। এই রোগীরা কোমরের চেয়ে পায়ে বেশি ব্যথা অনুভব করেন। দাঁড়িয়ে থাকলে, সামনে ঝুঁকে কাজ করলে বা হাঁটাহাঁটি করলে ব্যথা বেড়ে য়ায়।

প্রশ্ন : সাধারণত কোনো বয়সে কোমর ব্যথা বেশি হয়?

উত্তর : হাড় ক্ষয়জনিত কোমর ব্যথা সাধারণত চল্লিশের কাছাকাছি বয়সে বেশি হয়। তবে পিএলআইডি বা মাংসপেশিতে টানজনিত কোমর ব্যথা যে কোনো বয়সে হতে পারে। এটি রোগীর কাজের ধরন, খাদ্যাভ্যাস, শরীরের গঠন ও ওজন এমনকি বংশগত কারণের ওপরও অনেকাংশে নির্ভর করে। যারা ভারী কাজ করেন বা সারাদিন বসে কাজ করেন এবং যাদের ওজন অনেক বেশি তাদের কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।

প্রশ্ন : কোমর ব্যথার সঙ্গে অন্য রোগের সম্পর্ক আছে কি?

উত্তর : অবশ্যই। ডায়াবেটিস কোমর ব্যথাকে জটিল তীব্র ও দীর্ঘায়িত করে। তা ছাড়াও অনেকে কোমর ব্যথা হলে কিডনির সমস্যা হয়েছে বলে মনে করেন। কিন্তু কিডনির সমস্যায় খুব কম ক্ষেত্রেই কোমর ব্যথা হয়।

প্রশ্ন : কোমরের মতো ঘাড় ব্যথারও প্রচুর রোগী রয়েছে। এর কারণ কি?

উত্তর : সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস বা হাড় ক্ষয় ঘাড় ব্যথার মূল কারণ। কোমর ব্যথার মতো ডিস্ক প্রলাপস বা মাংসপেশিতে টান লাগার কারণেও ঘাড় ব্যথা হতে পারে।

প্রশ্ন : ঘাড় ব্যথার ব্যতিক্রমী কিছু উপসর্গ আছে, এগুলো কি কি?

উত্তর : আমরা অনেক রোগী পাই যারা শুধু বুকে বা পিঠে ব্যথা নিয়ে আসেন। অথচ পরীক্ষা করে দেখা যায় উনি সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস এ আক্রান্ত। ঘাড়ের রোগের কারণে মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, হাত ঝিঁ ঝিঁ ধরা ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে।

প্রশ্ন : কোন ঋতুতে এই ব্যথাগুলো বেশি হয়?

উত্তর : সাধারণত তাপমাত্রা পরিবর্তনের সময় অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তনের সময় সব ব্যথাই বৃদ্ধি পায়।

প্রশ্ন : ঘাড় ও কোমর ব্যথার চিকিৎসা কি?

উত্তর : আমি সব সময়ই একটি কথা বলে থাকি, সঠিক রোগ নির্ণয় হলো চিকিৎসার প্রথম শর্ত। প্রথমে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। শুধু চিকিৎসা দিলেই হবে না খেয়াল রাখতে হবে চিকিৎসা যেন হয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।

প্রশ্ন : ব্যথা হলেই আমরা ব্যথার ওষুধ সেবন করি, অনেকে মাসের পর মাস ব্যথানাশক সেবন করেন এটি কতটা যুক্তিযুক্ত?

উত্তর : ব্যথানাশক সাময়িক মুক্তি দিতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যথানাশক সেবন মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আর ব্যথানাশক ঘাড় বা কোমর ব্যথার কারণ নির্মূল করতে পারে না। ফিজিওথেরাপি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না এবং ব্যথার কারণকে নির্মূল করে।

প্রশ্ন : কি কি ফিজিওথেরাপি নিতে হবে?

উত্তর : দেখুন, গরম হিট সামান্য ট্রাকশান এমনকি সেরাজেম নামক অবৈজ্ঞানিক অপচিকিৎসাকেও অনেকে ফিজিওথেরাপি বলে চালিয়ে দিচ্ছে। তাই রোগীদের খুব সচেতন হতে হবে। ফিজিওথেরাপির প্রধান অংশ হলো রোগ নির্ণয়। শরীরের ঠিক কোন অংশে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা নির্ণয় করতে না পারলে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কাজে আসবে না। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসককে অবশ্যই সঠিক ডায়াগনোসিস করতে হবে এবং সেমত চিকিৎসা দিতে হবে, তবেই এই চিকিৎসা কাজে দেবে।

ডা. মোহাম্মদ আলী

পরিচালক ও চিফ কনসালট্যান্ট

হাসনা হেনা পেইন এন্ড ফিজিওথেরাপি রিসার্চ সেন্টার (এইচপিআরসি)

বাড়ি-২১, রোড-১০/এ, সেক্টর-১১,

Dating App
শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »