সোহরাওয়ার্দী শুভ »

পর্যন্ত যতগুলো মাহামারি বিশ্বকে জোড়ে সোড়ে ঝাকুনিদিয়েছিলো, তার প্রত্যেকটার পরে পৃথিবীর বিভিন্ন ক্ষেত্রেব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। যেমনস্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায়, জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থা এবং এমনকি শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে চলমানকরোনাভাইরাস মহামারী পৃথিবীতে একই রকম পরিবর্তনআনতে পারে বলে আমার মনে হয়।

করোনা (কোভিট-১৯) ভাইরাস মহামারীটির সাথে ইউরোপেরষষ্ঠ এবং চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি প্লেগের মহামারী, আমেরিকাতে ষোড়শ শতাব্দীর গুটি মহামারী এবং ১৯১৮সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীর সাথে মিল রয়েছে। তবেস্বাস্থ্যসেবা এবং মানব সভ্যতার বিকাশের বর্তমান স্তরবিবেচনা করে, অনুমান করা যায় যে আমরা অন্য সময়েরতুলনায় কভিড১৯ প্রাদুর্ভাবকে দ্রুত অতিক্রম করব না। এর স্থায়ীত্বকাল বেশ দীর্ঘ হতে পারে। কারন, এর উপসর্গের ব্যাপক পরিবর্তন, মানুষের অসচেতনতা, সরকারগুলোর উদাসীনতা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অপরিপক্কতা।

ভবিষ্যতের জন্য দুটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি রয়েছে। প্রথমটিবিশ্বায়ন প্রক্রিয়াটি আবার সংঘটিত হবে এবং প্রতিটি জাতিতাদের নিজস্ব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে। দ্বিতীয়টিউন্নত রাষ্ট্রগুলি সীমানা বন্ধ করে নিজের সমস্যাগুলিমোকাবেলা করার বাইরেও নিরাময়ের সন্ধান করতে পারে। যাপরবর্তীতে সুফল বয়ে আনবে, যাহা বর্তমানে দৃশ্যমান।

আসন্ন সময়ে, ধারণা করা যায় যে সমাজের বিশ্বাসঅর্জনকারী ক্যারিশম্যাটিক নেতারা বিশ্ব রাজনীতির শীর্ষেথাকবেন এবং বৈশ্বয়িক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন। তবেভাইরাসটি চীন থেকে উদ্ভূত হওয়া এবং এশিয়া থেকে পুরোপৃথিবী ছড়িয়ে পড়ার মতো বিষয়গুলি নির্দিষ্ট কিছু লোক জাতিকে ক্ষুব্ধ করে তুলবে যার ফলাফল বিছিন্নভাবে বিদ্বেষ ছড়াবে। ইতিমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট অভিযোগের তীর চীনের দিকে দিয়ে ফেলেছেন।

ব্যবসায়িক জীবন, প্রযুক্তি এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রেবিশেষীকরণের প্রয়োজনের প্রভাবে, মানবতার একটি নির্দিষ্টঅংশ, বিশেষত উন্নত দেশগুলিতে এবং কিছু উন্নয়নশীলদেশগুলিতে, ইতিহাসের মাধ্যমে অর্জন করা ইতিবাচকঅভ্যাস এবং দক্ষতা হারাবে যা শুধু সময়ের ব্যাপার।

এর প্রভাবে বাড়বে বর্ণ বৈষম্য, বিশ্ব অর্থনীতিতে আসবেমূল পরিবর্তন, সেই সাথে অর্থনৈতিকভাবে চীনা শ্রমমূল্যেরব্যয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবংরোবোটিকস, অটোমেশন এবং থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের ক্ষেত্রে যেমনঅগ্রগতি হয়েছিল, তেমনি রাজনীতি অর্থনীতিতে ভাটাপড়বে। এক্ষেত্রে  লাভজনকতা হ্রাস পাবে, তবে সরবরাহেরস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের এই প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বেশ কয়েকটি বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে প্রত্যেকটা দেশের শাসকরাই তাদের অবস্থান ঠিক রেখে যতটুকু করা সম্ভব ততটুকুই করবে। আর যেসমস্ত ক্ষেত্রে তারা সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে না  সেখানেই বা সেদেশেই শাসকরা গদি হারাতে পারে জনরোষের কারনে।

সোহরাওয়ার্দী শুভ
ফিচার লেখক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »