বার্তাবাংলা ডেস্ক »

করোনাভাইরাসের প্রভাবে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে, বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের উদ্যোগ এবং দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীর যৌথ প্রয়াস অব্যাহত থাকলে মহান আল্লাহ-তাআলার অশেষ রহমতে দেশ এই ক্রান্তিকাল হতে আশু উত্তরণ লাভ করে অচিরেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে, ইনশাআল্লাহ। সরকারের বহুমুখী উদ্যোগকে বেগবান করার লক্ষ্যে এবং বিশেষত নারায়ণগঞ্জের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান মডেল গ্রুপ তার সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সিএসআর কার্যক্রমকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে প্রয়োজনীয় নানামুখী সেবামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। নারায়ণগঞ্জের কৃতি সন্তান বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক জনাব মাসুদুজ্জামানের হাতে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই আর্ত-মানবতার সেবায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে কাজ করে আসছে।
করোনাভাইরাস বিস্তারের দিক দিয়ে নারায়ণগঞ্জ ইতিমধ্যে দেশের অন্যতম ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ফলে কোভিড-১৯ সংক্রমনের ঝুঁকি থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীকে রক্ষা করতে হলে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বলয় সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। মডেল গ্রুপ বিশ্বাস করে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ, সক্ষম প্রতিষ্ঠানসমূহ ও সচেতন জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে এই বিপর্যয় মোকাবেলা সম্ভব।
এই বিশ্বাস থেকে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ও আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বা ছয় লক্ষ ডলার সমমূল্যের চার পর্যায়ের সহায়তা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
সামাজিক সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি : প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে মডেল গ্রুপ তার নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর মাধ্যমে এবং সাধারণ মানুষের স্বতস্ফূর্ত সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা, রাস্তাঘাট জীবাণুমুক্তকরণ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যাপক পরিসরে গণসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা এবং গুজব প্রতিরোধের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা বলয় সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি : জনসমাগম পরিহার ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে প্রায় সব ধরনের প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম স্থগিত রাখায় দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে পড়েছে। উপার্জনহীন হয়ে পড়ায় অবরুদ্ধ বহু মানুষ ইতিমধ্যে খাদ্য সংকটের মুখোমুখি; যা দিনে দিনে আরো বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের হতদরিদ্র মানুষের, বিশেষ করে মডেল গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি তাদেরকে খাদ্য সহায়তা দেবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৫ হাজার পরিবারের কাছে প্রায় দেড় কোটি টাকা সমমূল্যের খাদ্য সহায়তা প্যাকেজ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই খাদ্য সহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসেবে প্রতিটি পরিবারের কাছে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেল এবং সাবান সম্বলিত একটি করে সহায়তা প্যাকেট পৌঁছে দেয়া হবে।

চিকিৎসা সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান : অত্যন্ত ছোয়াঁচে এবং অজানা চরিত্রের নতুন এই করোনাভাইরাসের সংক্রমন প্রতিরোধ ও প্রতিকার কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন দেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এই কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। একারণে মডেল গ্রুপ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবা প্রদানরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কর্তৃক নির্দেশিত সর্বোচ্চ মানের পিপিই পোশাক, হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল মাস্ক, গগলস এবং প্রোটেকটিভ শিল্ড আমদানীর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই সকল সুরক্ষা সামগ্রী সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কাজে লাগবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার সম্মানিত এমপি মহোদয়গণ, সম্মানিত মেয়র, জেলা প্রশাসক করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় যথেষ্ট পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাঁদের যেকোনো ডাকে যেখানে যেরকম সম্ভব আমরা অবশ্যই সাথে থাকব, ইনশাআল্লাহ। বিশেষভাবে উল্লেখ্য নারায়ণগঞ্জ ৪ ও ৫ আসনের এমপি ভ্রাতৃদ্বয়, মাননীয় এমপি সেলিম ওসমান এবং মাননীয় এমপি শামিম ওসমান। ওনাদের শ্রম ও সেবা অনেকের জন্যই অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। তাঁদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

নারায়ণগঞ্জের ডিসি মহোদয়ের প্রতিও আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। তাঁর নেতৃত্বে জেলার প্রশাসন সাহসিকতার সাথে করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ ধন্যবাদ জানাই ইউএনও নাহিদা বারিককে; যিনি তাঁর কার্যক্রম দিয়ে ইতিমধ্যে সবার কাছে সুনাম অর্জন করেছেন।
পাশপাশি আরো ধন্যবাদ জানাতে চাই প্রশাসনের নানা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সেনাসদস্যবৃন্দ, সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি ও কর্মীবৃন্দসহ তাঁদের সকলকে; যাঁরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমন থেকে দেশের মানুষকে নিরাপদে রাখতে নিরলস কাজ করে চলেছেন।
বিশেষভাবে আরো ধন্যবাদ বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশকে। দেশের এই ক্রান্তিকালে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ, লকডাউন নিয়ন্ত্রণ, অসহায় দুস্থ জনগোষ্ঠীর ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে তাঁরা যে ত্যাগ স্বীকার করছেন তা অতুলনীয়।

বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে ধন্যবাদ। কারণ, তাঁরা যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনাভাইরাস সংবাদ সংগ্রহ করে ঘরে অবরুদ্ধ মানুষের কাছে পরিবেশন করছেন- তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

কৃতজ্ঞতা বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজ ও স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কর্মীর প্রতি। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসা এবং দেশের স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে তাঁরা প্রাণপণ কাজ করে যাচ্ছেন।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর অপ্রতুলতাকে মেনে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনসহ সারাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীবৃন্দ নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। আমরা আলাদা করে তাঁদেরকে বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।

অর্থ সহায়তা কর্মসূচি : বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ ও বিপুল জনগোষ্ঠীর একটি দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমনের মতো এতো ব্যাপক একটি মহামারী প্রতিরোধে অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের একার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠবে না। তাই সরকারের উদ্যোগকে বেগবান করতে দেশের বিত্তবানদেরকে এবং সচেতন জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আসতে হবে। যে উদ্যোগের অংশ হিসেবে নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে তাদের ভালো কাজের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, চলমান করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গৃহীত কর্মসূচিকে আরো সাফল্যমণ্ডিত করতে মডেল গ্রুপের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ সহায়তা চেকের মাধ্যমে প্রদান করা হবে; যা নিম্নরূপ :

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহোদয় : ২০ লক্ষ টাকা
সংসদ সদস্য মহোদয়, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন : ২০ লক্ষ টাকা
সংসদ সদস্য মহোদয়, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন : ২০ লক্ষ টাকা
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মহোদয় : ২০ লক্ষ টাকা
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মহোদয় : ১০ লক্ষ টাকা
মধ্যবিত্ত নাগরিক শ্রেণির জন্য বিশেষ কর্মসূচি : ২০ লক্ষ টাকা
আলাদাভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি
কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য : ১০ লক্ষ টাকা
ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের জন্য : ১০ লক্ষ টাকা
মাসুদুজ্জামানের জন্মস্থান ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার : ২০ লক্ষ টাকা
দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ১২ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার শওকত সাহেব : ৫ লক্ষ টাকা
১৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার খোরশেদ সাহেব : ৩ লক্ষ টাকা
প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতেও সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখবে এই গ্রুপ, ইনশাআল্লাহ। মধ্যবিত্ত শ্রেণি যারা হাত পাততে পারেন না তাদের সুরক্ষায় দুটি নম্বর দেয়া হলো। অনুগ্রহ করে আপনারা নিঃসঙ্কোচে আপনাদের অসুবিধার কথা জানাবেন। আমরা কথা বলে আপনার সুবিধামতো আমাদের আর্থিক অথবা খাদ্য সাহায্য আপনার বাড়িতে পৌঁছে দেবো। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি নারায়নগঞ্জের অন্যান্য বিত্তবান সহৃদয় ব্যক্তিবর্গের সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রমে সাধ্য অনুযায়ী পাশে থাকতেও আগ্রহী।

নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এবং প্রাচীন বাণিজ্যিক নগরী। বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি অনেক প্রতিষ্ঠান এই নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত; বাণিজ্যিকভাবে সফল অনেক ধনাঢ্য ও বিত্তশালী ব্যক্তি এই নারায়নগঞ্জের সন্তান। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ ধরনের বহু দুর্যোগকে প্রতিহত করবার গর্বিত ইতিহাস এ নগরীর রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, কেবল নারায়নগঞ্জের সামর্থবান ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে এলেই এ অঞ্চলের করোনাভাইরাসের দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগকে বহুগুণ বেগবান করা সম্ভব। সম্ভব সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে এই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে নারায়ণগঞ্জকে দেশের মধ্যে একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা।

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »