হাজির করেছে মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট। মার্কিন এই দৈনিক চীনা সাময়িকী ক্যাইক্সিনের বরাত দিয়ে বলছে, চীনে করোনায় কমপক্ষে ৪৬ হাজার ৮০০ জন মারা গেছেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়া বলছে, কর্তৃপক্ষ চীনের মধ্যাঞ্চলীয় উহান শহরের দুই মাসের লক ডাউন প্রত্যাহার করে নেয়ার পর সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, উহানে করোনায় মাত্র আড়াই হাজার মানুষ মারা গেছেন; এটি তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না।
করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে উহানের অন্তত ৭টি বৃহৎ শ্মশানে দিনে গড়ে ৫০০ জনের মরদেহ পোড়ানোর পর তাদের স্বজনদের কাছে ছাই-ভস্ম হস্তান্তর করা হয়। সেই হিসেবে দেশটির সরকার করোনায় মৃত্যুর যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, প্রকৃত সংখ্যা তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
শুক্রবার উহানের বাসিন্দা ঝ্যাং রেডিও ফ্রি এশিয়াকে বলেছেন, সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান সত্য হতে পারে না… কারণ সেখানকার চুল্লিগুলোতে ২৪ ঘণ্টাই মরদেহ পোড়ানো হয়েছে। তাহলে সেখানে এত কম সংখ্যক মানুষ কীভাবে মারা যায়?
বর্তমানে উহানে সাতটি মরদেহ পোড়ানো কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়াও হ্যানকু, উচ্যাং এবং হ্যানইয়াং শহরেও আছে। এসব চুল্লিতে প্রত্যেকদিনের মরদেহ পোড়ানোর সক্ষমতার হিসেবে-নিকেশ করেছেন। চীনা সাময়িকী ক্যাইক্সিন বলছে, শুধুমাত্র একদিনেই হ্যানকু ফিউনারেল হোম কর্তৃপক্ষের কাছে মরদেহ পোড়ানোর পর ছাইভর্তি ৫ হাজার কলস দেয়া হয়েছে। দেশটির সরকার উহানে করোনায় মৃত্যুর যে সংখ্যা প্রকাশ করেছে; এই সংখ্যা তার দ্বিগুণ।
এই হিসেবে উহানের সাতটি শ্মশান থেকে প্রত্যেকদিন মরদেহের ছাই ভরা সাড়ে ৩ হাজার কলস সরবরাহ করা হয়েছে। চুল্লি কর্তৃপক্ষ করোনায় মৃতদের পরিবারকে জানিয়েছে যে, আগামী ৫ এপ্রিল ঐতিহ্যবাহী কিং মিং উৎসবের আগে তারা মৃতদের সৎকার সম্পন্ন করবে। এ হিসেবে গত ২৩ মার্চ থেকে মাত্র ১২ দিনে ৪২ হাজার মরদেহ পোড়ানো হয়েছে।
রেডিও ফ্রি এশিয়া আরেকটি হিসাবে বলছে, উহানের সাতটি শ্মশানের ৮৪টি চুল্লিতে ২৪ ঘণ্টাই মরদেহ পোড়ানোর সক্ষমতা রয়েছে। সেই হিসেবে সেখানে মোট মরদেহ পোড়ানো হয়েছে ৪৬ হাজার ৮০০।
হুবেই প্রদেশের একজন বাসিন্দা বলেন, এখান অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে যে লক ডাউনের আগে এবং পরে শহরের ৪০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। পুরোনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তির ডাকনাম মাও। তিনি বলেন, সম্ভবত কর্তৃপক্ষ ধীরে ধীরে আসল চিত্র প্রকাশ করছে। এটা ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবেও করে থাকতে পারে।
দেশটির প্রাদেশিক সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, অনেক মানুষ চিকিৎসার অভাবে বাড়িতে মারা গেছেন। উহানের প্রকৃত মৃত চিত্র নিয়ে কথা বলাটা খুবই স্পর্শকাতর। তবে কর্তৃপক্ষ আসল সংখ্যাটা জানে।
উহানের বাসিন্দা সান লিনান বলেন, যারা করোনায় মারা গেছেন, তাদের আত্মীয়রা প্রত্যেকদিন প্রিয়জনের ছাই-ভষ্ম নেয়ার জন্য শ্মশানের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট, রেডিও ফ্রি এশিয়া, দ্য নিউজ অস্ট্রেলিয়া।