রাকিব রাফি »

স্লোভেনিয়াতে ক্রমেই বেড়েই চলছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্ৰমিত রোগীর সংখ্যা। আজ স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টায় স্লোভেনিয়ার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ প্ৰতিবেদন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত স্লোভেনিয়াতে ৯৩৪ জনের শরীর কোভিড-১৯ খ্যাত নোভেল করোনা ভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়েছে। গতকাল পর্যন্ত এ সংখ্যাটি ছিলো ৮৯৭ এ, অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে নতুন করে আরও ৩৭ জন করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন এবং আজকে আরও দুইজনের মৃত্যুর খবর দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে স্লোভেনিয়াতে সর্বমোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২০ এবং এখন পর্যন্তই সুস্থ্য হয়ে বাসায় ফিরেছেন ১১ জন। আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানাতে, এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে ছেলইয়ে, ক্রানিয়ে ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর ম্যাটলিকা। মজার ব্যাপার হচ্ছে স্লোভেনিয়ার পশ্চিম অংশে অর্থাৎ ইতালি সংলগ্ন অংশেই করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে কম এবং স্লোভেনিয়ান টাইমস পত্রিকা কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী এ অঞ্চলে এখন পর্যন্ত নয় জন করোনা রোগীকে শনাক্ত করা গিয়েছে যা সত্যি আশ্চর্য।
গত ১৯ শে মার্চ থেকেই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধ করার জন্য সম্পূর্ণ স্লোভেনিয়াতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিলো যা এখনো বলবৎ আছে । সকল ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গত ১৬ই মার্চ থেকে পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলও আশা করা যাচ্ছে যে আগামী এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখের পর্যন্ত সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে।বন্ধ রাখা হয়েছে সকল ধরণের বাস ও ট্রেন সার্ভিস চলাচল এবং পরিস্থিতির সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটা পর্যন্ত দেশটির রাজধানী লুবলিয়ানাতে অবস্থিত ইয়োজে পুচনিক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকেও সকল ধরণের বিমান চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় (আনুমানিক দেড় মিটার দূরত্ব) না রেখে যদি একই স্থানে পাঁচ জনের অধিক জমায়েত হয় তাহলে প্রত্যকেকে ৪০০ ইউরো করে জরিমানা করা হবে। এছাড়াও গত মঙ্গলবার স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে এখন থেকে খুব বেশী প্রয়োজন না হলে কেউ এক মিউনিসিপ্যালিটি থেকে অন্য মিউনিসিপ্যালিটিতেও যাতায়াত করতে পারবে না এবং যে কোনও পাবলিক প্লেসে যাতায়াত করতে হলে এখন থেকে সকলকে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান করতে হবে। যে কোনও জরুরি প্রয়োজনে ১১২, ০৮০১৪০৪ কিংবা  +৩৮৬৩১৬৪৬৬১৭ এ তিনটি নম্বরের যে কোনও একটি নাম্বারে ফোন দিতে বলা হয়েছে বিশেষ করে কেউ যদি মনে করেন যে তাঁর শরীরে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এছাড়াও স্লোভেনিয়াতে বসবাসরত অন্য দেশের নাগরিকদেরকে নিজ দেশের নিকটস্থ অ্যাম্বাসি কিংবা কনস্যুলেট অফিসের সাথেও যে কোনও প্রয়োজনে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো স্লোভেনিয়াতেও বিস্তার লাভ করা করোনা ভাইরাসের প্রভাব দেশটির অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষের জনজীবনে প্রবলভাবে হতাশা বিরাজ করছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্লোভেনিয়ার ইনস্টিটিউট অব ম্যাক্রোইকোনোমিক অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পক্ষ থেকে চলতি অর্থ বছরে স্লোভেনিয়ার প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিলো সাড়ে তিন শতাংশ কিন্তু সাম্প্রতিককালে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো স্লোভেনিয়াতেও ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এ প্রবৃদ্ধির হার অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে দেশটির অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন। এদিকে গত শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় এক রেডিও বার্তায় দেশটির অর্থমন্ত্রী আন্দ্রেই শিরচেলির পক্ষ থেকে এ পরিস্থিতিতে যাঁরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তাঁদের পূর্ণবাসনের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে এ সময়ে আত্মনির্ভরশীল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যাঁদেরকে প্রতিমাসে সরকারকে ৪০০ ইউরো করে প্রদান করতে হতো কিন্তু এ পরিস্থিতিতে তাঁদেরকে এ অর্থ প্রদান করতে হবে না বলে স্লোভেনিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদেরকে একটি বেসিক অর্থ বরাদ্দ প্রদানের কথাও বলা হয়েছে। এছাড়াও যাঁরা শিক্ষার্থী রয়েছেন তাঁদেরকে আগামী এপ্রিল এবং মে এ দুইমাস ১৫০ থেকে ৩০০ ইউরো করে আর্থিক অনুদান প্রদানের কথাও বলা হয়েছে। অন্যদিকে এ পরিস্থিতির কারণে এ সময়ে যাঁরা সাময়িকভাবে বেকারত্ব সমস্যায় ভুগছেন তাঁদেরকে এপ্রিল এবং মে এই দুই মাসে ৭০০ ইউরো করে অর্থ সাহায্য দেওয়ার কথাও এ প্রস্তাবনায় উঠে এসেছে। একই সাথে কৃষক এবং স্লোভেনিয়াতে যাঁরা পেনশনভোগী তাঁদেরকেও বিশেষভাবে সহযোগিতা করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপের কথাও এ প্রস্তাবনায় উঠে এসেছে। আশা করা যাচ্ছে যে সম্পূর্ণ প্রস্তাবনাটি আগামী সপ্তাহের মধ্যে দেশটির জাতীয় সংসদে পাশ হতে পারে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে এখনও বেশ কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গিয়েছে। স্লোভেনিয়াতে যাঁরা অন্যান্য দেশের অভিবাসী রয়েছেন তাঁদের বিষয়ে আসলে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে কোনও নির্দেশনা আসে নি। বিশেষ করে এক সময় যুগোস্লাভিয়ার অধীনে থাকা অন্যান্য দেশ যেমনঃ বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, কসোভো, ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো এ সকল দেশের থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইমিগ্র্যান্ট স্লোভেনিয়াতে বসবাস করেন এবং তাঁদের অনেকের নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে স্লোভেনিয়াতে। অনেকে আবার এখানে বিভিন্ন ধরণের জীবিকার সাথে জড়িত এবং কেউ আবার স্লোভেনিয়াতে বিভিন্ন শিক্ষা-প্ৰতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছেন। তাঁদের বিষয়ে আসলে এখন পর্যন্ত স্লোভেনিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে কোনও স্পষ্ট ঘোষণা আসে নি। এমনকি স্লোভেনিয়া সরকার ঘোষিত এ সকল আর্থিক সাহায্যের অংশীদার তাঁরা হতে পারবেন কি না কিংবা এ পরিস্থিতিতে তাঁদের মধ্যে যাঁদের কোনও কাজ নেই কিংবা যাঁদের রেসিডেন্স পারমিটের প্রায় শেষের দিকে তাঁদের ব্যাপারেও স্পষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত স্লোভেনিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আসে নি।
রাকিব হাসান,
শিক্ষার্থী,
দ্বিতীয় বর্ষ,
ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স,
ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা,
স্লোভেনিয়া!
শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »