সবরের ফল সুমিষ্ট হয়। হয়তো কিছুটা দেরি হতে পারে…! একটা শিশু ছোট থেকে বড় হতে কতবার যে হোঁচট খেয়ে উঠে দাঁড়ায় , তার অন্ত নেই। সে যদি মনে করতো, বার বার পড়ে যাচ্ছি, আর হাটতে চেষ্টা করব না। তাহলে সে আর হয়তো হাটতে শিখতে পারতো না। মানুষকে আল্লাহ এভাবেই বানিয়েছেন।
সময়ের সাথে সাথে মানুষ খাপ খাইয়ে নিতে পারে৷ কারো দেরিতে, কারো আস্তে। দেরির ক্ষেত্রে আশাহত হয়ে লক্ষ্য থেকে সরে, অন্য পথে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল থাকে। কিন্তু সবর করলে একদিন সে আনন্দঅশ্রুর সাধ পায়। সেদিন পেছনের কষ্ট আর কষ্ট মনে হয়না। দীর্ঘশ্বাসের সাথে মিশে যায়। আমরা প্রত্যেকে জীবন চলার পথে, ছোট বড় গর্তে পড়ে যাই। কখনো কখনো গর্ত অনেক গভীর হতে পারে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং সবরের পুরষ্কার হিসাবে সেখান থেকেও বের হওয়া অসম্ভব নয়। আমরা কি জানি না?
হযরত ইউসুফ আলাইহিস ওয়াসাল্লামকে তার ভাইয়েরা মরুভূমির পরিত্যক্ত গভীর কূপে ফেলে গিয়েছিল। এবং সেখানে কেউ যেতোও না। কিন্তু আল্লাহ তাকে বের করেছেন। মিশরের বাদশা করেছিলেন। এবং যারা তার সাথে জুলুম করেছিল তারা অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়েছিল। এসব ঘটনা আমাদের জন্য শিক্ষা। প্রত্যেক নবী (আঃ) এসেছিলেন আমাদের শিক্ষক হিসাবে। বিভিন্ন ঘটনা আল্লাহ পরিকল্পনা করে ঘটিয়েছেন, যার হাকিকত আল্লাহ জানেন। অবশ্যই সেসব থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার জন্য। হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম, সন্তান ইউসুফ নবীকে অনেক ভালবাসতেন।
উনাকে হারানোর বেদনায় কাঁদতে কাঁদতে চোখের দৃষ্টি হারিয়েছিলেন এবং ইয়াকুব নবী (আঃ) তার উপর সবর করেছিলেন। আল্লাহর মহিমায়, পিতা পুত্রের সাক্ষাৎ হয়েছিল, যদিও সেটা অনেক দেরিতে। এবং আল্লাহ চোখের দৃষ্টিও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। চিন্তা করি, সেটা কতটা খুশির মূহুর্ত ছিল। পেছনের সব কষ্ট তখন ম্লান হয়ে যায়৷ এবং সবরের পুরষ্কার তো স্বয়ং আল্লাহ দেন।
আল্লাহ কারো উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেলে তার আর চিন্তা কি! আল্লাহ কেন করলেন আমার সাথে এমন? না করলেও তো পারতেন! (নাউজুবিল্লাহ) এসব কথা সবরের খেলাফ। এবং গায়েবের বিষয় কেবল আল্লাহ জানেন। উনি যা জানেন, তা আমরা জানিনা। কিসের কি হাকিকত তা আল্লাহ জানেন। বাহ্যিকভাবে অনেক কিছু সাময়িকভাবে খারাপ মনে হতে পারে। কিন্তু সেটার বিপরীতে এত ভাল কিছু থাকতে পারে, যার জ্ঞান আমাদের নেই। হতে পারে দুনিয়াতে বা আখিরাতে।
আখিরাতে যদি দুনিয়াবী ক্ষতির কারণে বদলা পাই তাহলে আমাদের মনে হবে, কোনো বদলা দুনিয়াতে না পেলেই ভাল হতো! আল্লাহ মহান, আল্লাহ কারো উপর সামান্যতম জুলুম করেন না। জুলুম আমরা নিজেদের উপর নিজেরা করি। আর আল্লাহ খুশি হয়ে গেলে, আমাদের কাছে যেসব ছোট কাজ, সেগুলোর বদলাই এত বেশি হবে যে, যা আমরা কল্পনাও করতে পারব না।
বেলাল উদ্দিন : পরিচালক : রিয়েল গ্রুপ